ডেস্ক নিউজ :
চলতি বছরও সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের বিধান রেখে ‘হজ প্যাকেজ, ১৪৩৯ হিজরি/২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এবার হজ পালনে প্যাকেজ-১ এ ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ এবং প্যাকেজ-২ এ ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা খরচ করতে হবে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে হজ প্যাকেজ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।
গত হজের তুলনায় প্যাকেজ-১ এ খরচ বেড়েছে ১৬ হাজার ৪২১ টাকা ও প্যাকেজ-২ এ বেড়েছে ১২ হাজার ৪ টাকা। গতবার প্যাকেজ-১ এ খরচ হয় ৩ লাখ ৮১ হাজার ৫০৮ টাকা। অন্যদিকে প্যাকেজ-২ এ খরচ হয় ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকা। একই সঙ্গে সংশোধিত ‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি ১৪৩৯ (২০১৮)’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২১ আগস্ট (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ জন ও অবশিষ্ট এক লাখ ২০ হাজার জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের সুযোগ পাবেন।
এবার ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জসহ বিমান ভাড়া এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘গত বছর মোট বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা। এবার ১৪ হাজার টাকার মতো বেড়েছে।’
মূলত এক লাখ ৬৮ হাজার ২৭৭ টাকার সঙ্গে অন্যান্য খরচ যোগ করে হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এবার বিমান ভাড়া বাড়ল কেন- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে, ডলারের দামও একটু বেড়েছে।’
এ সময় উপস্থিত ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘সৌদি আরব এবার নতুন করে বিল্ডিং চার্জ ধার্য করেছে। এক্সাইজ ডিউটি এক হাজার থেকে দুই হাজার রিয়াল করেছে সৌদি সরকার। শুধু ডলারের দাম বাড়ার কারণে ৩ হাজার ৮৭৫ টাকা বেড়েছে ভাড়ায়।’
বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো সরকারি প্যাকেজ-২ এর কম কোনো প্যাকেজ নির্ধারণ করতে পারবেন না বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, ‘এবারও একটি হজ এজেন্সি কমপক্ষে ১৫০ জন ও সর্বোচ্চ ৩০০ জন হজযাত্রী পাঠাতে পারবেন। কোনো ক্রমেই এক ফ্লাইটে তিনজন মোয়াল্লেমের বেশি হজযাত্রী এবং তিনটি এজেন্সির বেশি হজযাত্রী পাঠানো যাবে না।’
এবারও হজের সময় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কুপনের মাধ্যমে কুরবানি দিতে হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘মক্কা শরীফ এলাকা থেকে ২ কিলোমিটারের বেশি দূরে বাড়ি ভাড়া করলে যাতায়াতে গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ সালে পবিত্র হজ পালন করেছেন কিংবা হজ ভিসা পেয়েছিলেন হজে যেতে পারেননি, তাদের মধ্যে যারা ২০১৮ সালে হজ করবেন তাদের সৌদি সরকারকে ২ হাজার ১০০ বা রিয়ালের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এটা ডিসকারেজের জন্য করা হয়েছে।’
হজযাত্রীদেরই ট্রলি ব্যাগ কিনতে হবে
নতুন নিয়ম অনুযায়ী এবার থেকে হজযাত্রীদেরই ট্রলিব্যাগ কিনতে হবে। সরকার কিংবা এজেন্সিগুলো ট্রলিব্যাগ সরবরাহ করবে না বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি ১৪৩৯ (২০১৮)’ এর সংশোধনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে শফিউল আলম বলেন, ‘আগের নিয়ম অনুযায়ী হজে গমনেচ্ছুদের প্রাক-নিবন্ধনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রয়োজন হতো। তবে এখন নতুন নিয়ম অনুযায়ী এনআইডি না থাকলেও প্রবাসীরা পাসপোর্ট দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করতে পারবেন। হজে গমনেচ্ছু ব্যক্তির নিবন্ধনের জন্য এমআরপি পাসপোর্ট থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনলাইনে প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে এবং এ তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভান্ডার ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্য ভান্ডারের সঙ্গে যাচাই করা হবে।’
পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না হজযাত্রীদের
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগে প্রভিশন ছিল পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে হজযাত্রীদের তথ্য যাচাই করা হবে। এখন এ প্রভিশনটা (নীতি থেকে) বাদ দেয়া হয়েছে। এর কারণ হল পাসপোর্ট যখন দেয়া হয় তখন একবার পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়। দুইবার যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন নেই।’
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রাক-নিবন্ধিত ব্যক্তিদের হজ প্যাকেজে ঘোষিত টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে হজযাত্রী হিসেবে নিবন্ধন করলে হজ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে পিলগ্রিম আইডি বা পিআইডি পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
প্রাক-নিবন্ধনের মেয়াদ থাকবে ২ বছর
শফিউল আলম বলেন, ‘প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীরা পর পর দুই বছর নিবন্ধনের সুযোগ গ্রহণ না করলে তিনি হজে যেতে ইচ্ছুক নন ধরে তার প্রাক-নিবন্ধন বাতিল করা হবে। আগে যেটা এক বছর ছিল এখন সেটা বাড়িয়ে ২ বছর করা হল।’
‘প্রতি বছর হজ গাইডদের তথ্য ফরম পূরণ করে সরকারের অনুমোদন নিয়ে ফ্লাইট শুরুর ২ মাস আগে হজ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে এন্ট্রি করতে হবে। এটা আগে ছিল না।’
সংশোধিত নীতি অনুযায়ী প্রতি বছর ১০ শাওয়ালের মধ্যেই প্রতিস্থাপন কার্যক্রম শেষ করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্যে মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কমিটি বিশেষ বিবেচনায় প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্য থেকে প্রতিস্থাপন করা যাবে। তবে কোনো অবস্থায়ই একটি এজেন্সির মূল হজযাত্রীর ৪ শতাংশের বেশি প্রতিস্থাপনযোগ্য হবে না।’
পাঠকের মতামত: