ঢাকা,রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বার কাউন্সিল পরীক্ষা ২ জুন

bangladesh-barআইনজীবীদের সনদ প্রদানকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল’ পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। সব জল্পনা-কল্পনা ও উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ পরীক্ষা।

আইন পেশায় অংশ নেয়ার জন্য প্রথম ধাপের এ সনদ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২ জুন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। আসন্ন পরীক্ষা উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের (শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের) পদচারণায় মুখর বার কাউন্সিল চত্বর। সমানতালে চলছে পরীক্ষার ফরম পূরণের কাজ। মনের আনন্দে শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ করছেন, একে অপরকে সহযোগিতাও করছেন।

নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী এলএলবি পাস করার পর সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে বার কাউন্সিলের নির্ধারিত ফর্মে ইন্টিমেশন (সদস্যপদের আবেদন) পেপার জমা দেন। এরপর শিক্ষানবিশ হিসেবে ছয় মাস পার হলে বার কাউন্সিল শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রেশন ফরম দেয়। এনরোলমেন্ট (আইনজীবীদের তালিকাভুক্তি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রাথমিক যোগ্যতা এই রেজিস্ট্রেশন। এরপর পরীক্ষার জন্য বার কাউন্সিল সময়সূচি ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন করেন।

জানা গেছে, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ সময়ের মধ্যে দুবার পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র একবার। এতে সনদ প্রার্থীদের ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হলেও কিছুই করার নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী  বলেন, পাস করার পর আমাদের এমনিতেই রেজিস্ট্রেশনের জন্য ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়।

আমার রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। পার হয়েছে এক বছরেরও বেশি সময়। তিনি আরও বলেন, ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবারও বিষয়টি নিয়ে একধরনের উৎকণ্ঠায় আছে। দেরিতে হলেও পরীক্ষার খবরে সবার উৎকণ্ঠা কমেছে।

বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শ.ম. রেজাউল করিম  বলেন, হাইকোর্টের একটি রায়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত আইনে দুই বছরের ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় ছিল। এসব কারণে এনরোলমেন্ট পরীক্ষা বিলম্ব হয়েছে। এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের নির্বাচিত কমিটির কোনো গাফিলতি নেই। আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার পর ওই বাধা দূর হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন,‘আগামী ২ জুন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ফরম পূরণের জন্য ২০ থেকে ৩০ মার্চ দিন ঠিক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আমার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দিয়েছি।’ তিনি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

বার কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, আগে সাধারণত বছরে দু’বার এনরোলমেন্ট পরীক্ষা নেয়া হতো। সর্বশেষ ২০১৫ সালের মাঝামাঝি এনরোলমেন্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক এই তিন ধাপের পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ পায় ২০১৬ সালের ১৪ মে। এরপর দীর্ঘ সময় পার হয়েছে। ২ জুন ফের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বার কাউন্সিলের তথ্য কর্মকর্তা নাজমুল আহসান জানান, সাধারণত রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষে পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এখন পর্যন্ত এনরোলমেন্ট পরীক্ষার জন্য প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অপেক্ষায় রয়েছেন। নতুন তারিখ ঘোষণায় তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো।

প্রায় দুই বছর ধরে বার কাউন্সিল পরীক্ষার জন্য অপেক্ষায় থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া আরেফিন জানান, প্রায় দুই বছরের বেশি সময় পার করলাম কিন্তু পরীক্ষা হলো না। ফলে ক্যারিয়ারের দৌড়ে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এ জন্য আমরা শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই দায়ী নই।

বরং বার কাউন্সিল এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি আরও জানান, শুনেছি আগামী ২ জুন পরীক্ষা হবে। কিন্তু আবারও যদি পরীক্ষা পিছিয়ে যায়! এবার পরীক্ষা পেছালে আইন পেশার প্রতি আমাদের এবং আমাদের পরিবারের যে ভক্তি ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল, তা নষ্ট হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্নও ভেস্তে যাবে।

পাঠকের মতামত: