ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

হাওরের মানুষের পাশে দাঁড়ান: প্রধানমন্ত্রী

hasনিজস্ব প্রতিবেদক ::::
হাওর অঞ্চলের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলনকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ লাকি আখন্দের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা বৈঠকের শুরুতেই একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ ছাড়া মন্ত্রিসভা মৎস্য সঙ্গনিরোধ আইন ২০১৭-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। আমদানি নিষিদ্ধ এমন মাছ আমদানি ও চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এ আইনে। একইসঙ্গে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মৎস্য জাতীয় কোনো কিছু আমদানি করা যাবে না। এই আইনের বিধান লঙ্ঘিত হলে দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

বাঁধ ভেঙে এবার ডুবল পাকনার হাওর

এদিকে, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
সোমবার ভোরে হাওরের উরারবন্দ নামক স্থানে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় হাওরটি। এটি ছিল জেলার সর্বশেষ সুরক্ষিত একটি বড় হাওর।
এদিকে গত শনিবার রাতে তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের বাঁধ ভেঙে গেলে সেখানের ৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ডুবে যায়। জেলার বড় এই দুটি হাওর ডুবে যাওয়া জেলাবাসী চরম এক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হলেন।

এলাকাবাসী জানান,পাকনার হাওরটিতে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা ও নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার অনেক কৃষকদের বোরো জমি রয়েছে। চৈত্রের শেষে সিলেট অঞ্চলে রোরো ফসলের উপর বিপর্যয় শুরু হলে জামালগঞ্জের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের পাকনার হাওরের ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন এলাকাবাসী। তবে গত এক মাস ধরে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা বাঁধে ছিল না জানিয়েছেন ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু তালুকদার।

এলাকাবাসী জানান, শতাধিক শ্রমিক রবিবার রাতেও বাঁধে কাজ করেছেন। বাঁধ রক্ষায় ৫০ জন পাহাড়াদারও নিয়োগ ছিলেন। কিন্তু সোমবার ভোরে বৃষ্টির সময় উরারবন্দ বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। গ্রাম পুলিশ, শ্রমিক ও পাহাড়ারদের নিয়ে শেষ চেষ্টা করেও বাঁধ রক্ষা করা যায়নি।

ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু তালুকদার বলেন, হাওরের এত বড় দুর্যোগে পাউবোর কোনো অফিসারকে বাঁধে পাওয়া যায়নি।

জামালগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রসূন কুমার চক্রবর্তী বলেন, “হাওরটি রক্ষায় এলাকার মানুষ এত শ্রম দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন, সেটি ভাষায় প্রকাশ করার নয়। কিন্তু সবার চেষ্টা, শ্রম ব্যর্থ করে দিয়ে এখন হাওরটি তলিয়ে যাচ্ছে। এই হাওরে প্রায় আট হাজার হেক্টর জমি আছে। হাওরে যেভাবে পানি ঢুকছে, এতে মনে হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সব ধান তলিয়ে যাবে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা গেছে, সুনামগঞ্জে ইতিমধ্যে ছোট-বড় ১৪২টি হাওরের ফসলহানি হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান। এবার জেলায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, আবাদ করা ধানের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, “এই হাওর আমাদের শেষ ভরসা ছিল। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত স্থানীয় কৃষক, এলাকাবাসী, ইউএনওসহ কয়েক শ মানুষ ছিল। প্রবল বৃষ্টি থাকায় সকালে আবার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই খবর এল বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রবল পানির চাপে বাঁধ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।”

পাঠকের মতামত: