বান্দরবান প্রতিনিধি ।।
বান্দরবানে গণস্বাস্থ্য পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ২০কিমি দূরে বান্দরবান-রোয়াংছড়ির মাঝখানে ওয়াইজংশন বাজারে ঢাকার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। ওয়াইজংশনে দুর্গম এলাকাসমূহে বসবাসরত ম্রো উপজাতি সম্প্রদায়েরর স্বাস্থ্য সেবার সহায়তা হিসেবে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অর্থের বিনিময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধপত্র বিক্রি করা হচ্ছে। ম্রো জনগোষ্ঠীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিক্রি করা মেয়াদোত্তীর্ণ বেশকিছু সিরাপ এবং ট্যাবলেট-ক্যাপসুলও উদ্ধার করেছে জেলা সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ। গঠিত হয়েছে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও। জব্দ করা হয়েছে ওয়াইজংশন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ যাবতীয় ওষুধপত্রও। জেলা সদরের অদূরে বান্দরবান-রুমা-থানচি সড়কের পাশে ওয়াইজংশন বাজারে উক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা সেবার নামে ম্রো ও বিভিন্ন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের শিশুসহ নানা বয়সী রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান ও কথিত ন্যায্যমুল্যে ওষুধপত্রও বিক্রি করা হচ্ছিল। গত বুধবার অন্যান্য দিনের মত সকালে ম্রো সম্প্রদায়ের কয়েকটি শিশুর রোগ নিরাময়ে ওষুধ বিক্রি করা হয়। সেখানে শিক্ষিত ম্রো যুবকরা ওষুধের প্যাকেট পরীক্ষা করে জানতে পারেন- গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিকেলস্ লিমিটেডের তৈরি করা ৫০ এমএল পরিমাণ বোতলজাতকরা সিরাপটি একটি শিশুর রোগ নিরাময়ের জন্য বিক্রি করা হয়েছে। প্যাকেটের দুই পাশেই ভিন্ন রকমের দামও লেখা রয়েছে। ওই সিরাপের এক পাশে লিখা দাম-২৫০ টাকা এবং অপর পাশে লিখা রয়েছে দাম- ১২৫টাকা। তবে প্রকৃত দাম- ৪০০ টাকা লিখা থাকলেও সেই দাম দাগ দিয়ে কেটে দেয়া হয়েছে। এভাবেই হরেক রকমের সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল নানাস্থানে ভিন্নভাবে দাম আদায় করা হচ্ছে। বিক্রি করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও। এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা.অংসৈই প্রু মারমা বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাবার পর তাৎক্ষণিকভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকা বিভিন্ন ওষুধপত্র জব্দ করা হয়েছে। ম্রো সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রাংলাই ম্রো বলেন, বিভিন্ন শর্তভঙ্গ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ওয়াইজংশন বাজারে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি স্থাপন করে। তাদেরকে শর্তপূরণ করে প্রকৃত ও ভালওষুধ বিক্রির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিষয়ে বহুবার তাগাদা দেয়া হয়েছে। তা সত্বেও তারা দুর্গম ও গ্রামীণ এলাকার অসহায় ম্রোসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের রোগীদের কাছে কথিত কমদামে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধপত্র বিক্রি করে আসছে। ফলে জনঅসন্তোষ বিরাজ করছে এলাকায়। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ইনচার্জ মেনথান ম্রো (নামের আগে ডা. ও সাভার থেকে প্যারামেডিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত লিখা রয়েছে প্যাডসহ ভিজিটিং কার্ডে) মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির বিষয়ে বলেন, কর্মীরা তার অজান্তেই শিশুদের রোগের জন্যে এসব ওষুধ অসাবধানতায় বিক্রি করেছে। তিনি সরকারি ডাক্তারের কাছে এব্যাপারে সন্তোষজনক জবাবও দিতে পারেননি। ওয়াইজংশন এলাকায় বসবাসরত ম্রোসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, অসহায় গরিব পাহাড়িদের জিম্মি করে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রর কর্মকর্তা-কর্মীরা হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল অর্থ কথিত চিকিৎসার নামে। কিন্তু সরকারি কোন মহলই বিষয়টি আমলে নেয়নি।
পাঠকের মতামত: