ঢাকা,সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

বাধ্য হয়ে গাইড বই কিনছে শিক্ষার্থীরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

বাধ্য হয়ে চড়া দামে গাইড বই কিনছে শিক্ষার্থীরা। আর সেই টাকার ভাগ পায় শিক্ষক ও লাইব্রেরী মালিকরা। মূলত কমিশন বাণিজ্যের জন্যই শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে জানান অভিভাবকরা। আর শিক্ষার্থীদের দাবী শিক্ষকদের পছন্দমত গাইড বই না কিনলে ক্লাসে বকা দেয়। আবার প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে আলাদা গাইড বই নিয়ে যেতে হয়। এতে আর্থিক এবং মানসিক ভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কাউকে কিছুই বলার নেই।
শহরের বুক ভিলা লাইব্রেরীতে গিয়ে আলাপকালে শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার গৃহীনি আফরোজা খানম বলেন, মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ে তার জন্য গাইড বই কিনতে এসেছি। তবে স্কুলের শিক্ষকের কথা মত নির্দিষ্ট লাইব্রেরী থেকে এবং পাঞ্জেরী গাইড বই কিনতে এসেছি। একই সাথে এক ছেলে ৫ম শ্রেনীতে আছে তার জন্য গাইড বই লাগবে। তিনি বলেন, আমার পরিচিত বেশির ভাগ অভিভাবক অনেক আগেই গাইড বই কিনে নিয়ে গেছে মূলত আমার স্বামী বিদেশ থাকে সেখানে অবস্থা খুব ভাল না,তাই টাকার খুব অভাব সেজন্য দেরী হয়েছে। এর মধ্যে গাইড বই না কিনায় স্কুলের শিক্ষকরা বহু ভাবে ছেলে মেয়েদের নাজেহাল করেছে বলে জানান তিনি। এদিকে শহরের রক্ষিত মার্কেটের রহমানিয়া লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখা গেছে অসংখ্য অভিবাবক শিক্ষার্থী গাইড বই কিনতে এসেছে,এর মধ্যে খুরুশকুল থেকে আসা অভিবাবক নাজিম উদ্দিন বলেন, মেয়ে খুরুশকুল মডেল হাই স্কুলে পড়ে,আরেক ছেলে পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে তারা অনেক দিন ধরে গাইড বই কিনে দেওয়ার কথা বলছে কিন্তু টাকার অভাবে এত দিন পারিনি। এখন ৩ টি বই কিনেছি ১১শত টাকা দিয়ে।মূলত শিক্ষকদের চাপে পড়ে ছাত্ররা অসহায় জানিয়ে খোঁদ এক লাইব্রেরী কর্মচারী বলেন,এখানে পুরু জেলার বেশির ভাগ স্কুলের সাথে বিভিন্ন লাইব্রেরীর চুক্তি থাকে তবে এর পেছনে মূলত ভুমিকা রাখে প্রকাশনী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা। তারা আগে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে প্রতিষ্টান প্রধানদের সাথে চুক্তি করে আবার কিছু শিক্ষকরা আছে যারা ভাল প্রাইভেট পড়ায় তাদের সাথেও প্রকাশনী সংস্থা গুলোর চুক্তি থাকে। তাই সব ছাত্রছাত্রী গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে। রক্ষিত মার্কেটের বিদ্যাসাগর লাইব্রেরী তে গাইড বই কেনারত ইলিয়াছ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থী বলেণ,এতদিন সহপাঠিদের কাছ থেকে গাইড বই নিয়ে সহায়তা নিয়ে পড়েছি। চেস্টা করেছিলাম নতুন গাইড বই না কিনতে, কারন আমাদের পুরাতন গাইড বই আছে। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরা ক্লাসে সবার সামনে নাজেহাল করে। উনাদের পছন্দমত গাইড বই এতদিন না কেনায় কয়েকবার নাজেহাল হয়েছি, তাই এখন কিনতে এসেছি। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শহর এবং শহরের পার্শবর্তি বেশির ভাগ স্কুলেই গাইড বই কিনতে বাধ্য করছে শিক্ষকরা। এদিকে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রুল পাম্পের পাশে প্রাইভেট পড়ানো সাহিত্যিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া ছাত্রী দিলশাদ বলেন, আমাদের সমস্যা হয়েছে স্কুলের শ্রেনী শিক্ষক বলে লেকচার গাইডের কথা আর জালাল স্যার বলে অন্য গাইডের কথা। প্রথমে কিছুদিন একটি গাইড নিয়ে পার করলেও এখন আরেকটি গাইড কিনতে হচ্ছে তাই গাইড কিনতে এসেছি। এ ব্যাপারে কক্সবাজার মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলী বলেন, বর্তমান সৃজনশীল পদ্ধতির মাঝে গাইড বই নিয়ে পড়া মানে বিশাল সমুদ্রের মাঝে ঢিল মারার সমান। গাইড বই অনুসরণকরে বেশির ভাগ সময় মূল পাঠ্যকে হারিয়ে ফেলে। আর যে সমস্ত শিক্ষক স্কুলে বা অন্য কোথাও শিক্ষার্থীদের গাইডের কথা বলবে তারা মূলত প্রাইভেট কোচিং নির্ভর শিক্ষক। তারা সহজে শিক্ষার্থীদের মনজয় করা এবং কোন মতে একটি প্রশ্ন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য গাইড বইয়ের আশ্রয় নেয়। এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যাপক নুরুল আজিম বলেন,আমার মতে গ্রামের কিছু পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর জন্য গাইড বই প্রয়োজন। তবে সবার জন্য নয়। বর্তমানে গণহারে গাইড বইয়ের উপর নির্ভরশীলতার কারনে মেধাবি জাতি পাওয়া কঠিন হচ্ছে। অনেক ছাত্রছাত্রীকে দেখি গণিতের সূত্র মুখস্ত করছে সেই কারনে পরীক্ষায় একই ধারার আরেকটি অংক আসলে সে সমাধান করতে পারেনা। এ গুলো গাইড বইয়ের কূফল। তিনি বলেন,শুধু স্কুলের শিক্ষার্থীরা নয় বরং কলেজের শিক্ষার্থীরা আরো বেশি গাইড বই নির্ভর হয়ে পড়ছে। এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। আর বাজারে গাইড বই নিষিদ্ধ থাকার কথা থাকলে প্রকাশ্য বিক্রি করছে সেখানে কোন বাধা নেই এটা ঠিক না।
এদিকে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন,পাঠ্য বই থেকে প্রশ্নের উত্তর বের করার জন্য পুরু বই পড়তে হবে দেখা যায় সেই ধর্য্যও অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে থাকেনা। আবার শিক্ষকরা বাড়তি সুবিধা পাওয়ার জন্য গাইড বই ব্যবহার করছে। তবে এটা কোন ভাবেই কাম্যনা। যেমন আমাদের জিপিএ বাড়ছে কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে গিয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে কারন তার বেসিক নেই শুধু মুখস্ত বিদ্যার কারনে পাস করে গেছে। তাই আমি মনে করি গাইড বই নয় মূল বই থেকে পাঠ উদ্ধার করে উত্তর করতে হবে।

পাঠকের মতামত: