বিশেষ প্রতিনিধি :: ‘অবাজি বাংলাদেশত হনো নির্বাচনত এদুগ্গুন টিয়া ন পাই। এক্ষান সমিতির নির্বাচনে জিতি বেল্লায় ওবুক এদুগ্গুন টিয়া দেয়া পরে নিকি?’… অর্থাৎ বাংলাদেশের কোন নির্বাচনে এতগুলো টাকা পাইনি। একটি সমিতিতে জেতার জন্য এত টাকা দিতে হয় নাকি?’ -কথাগুলো বদরখালী সমিতির ভোটারদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভোটার বলেন, এবারের ভোটে যোগ্য প্রার্থীর মুল্যায়ন হয়নি। টাকার খেলা জয় পেয়েছে।
নির্বাচনের তপশীল ঘোষণার পর থেকে বদরখালী বাজার ও আশপাশ এলাকা সরগরম হয়ে উঠে। অধিকাংশ প্রার্থী টাকায় ভোট কিনেছে। তারা বিজয়ীও হয়েছে। আবার কয়েকজন প্রার্থী ভোট কিনেও পেরে ওঠেনি, বেশি টাকার কাছে কম টাকা পরাজিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির নির্বাচনে একজন সভাপতি প্রার্থী এক থেকে দেড় কোটি টাকা, একজন সহসভাপতি প্রার্থী ৮০ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করেছে।
ভোট পেতে একজন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছেন।
তাতে শেষ নয়, সাধারণ সদস্য পদের জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে প্রার্থীরা। তবে, ভোটে কিছু ক্লিন ইমেজের প্রার্থীও বিজয়ী হয়েছে।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, সমিতিতে কোন সে মধু আছে? এত টাকা ব্যয় করে কোন সোনার হরিণের জন্য ছুটেছেন প্রার্থীরা?
বদরখালী সমিতির নির্বাচন পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলেন কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি তোফায়েল আহমদ।
ভোটের প্রতিক্রিয়া হিসাবে তিনি নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘চকরিয়ার বদরখালী নির্বাচনে একদিনেই জনপ্রতি আয় নাকি ২৫/৩০ হাজার টাকা! হায়রে বিবেক, ইয়াবা কারবারিরা ভোটে কেন জিতে এবার বুঝলাম।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘এক সভাপতি প্রার্থী ভোটারদের তিন দফা টাকা দিয়েছেন। ভোটাররা বলছেন-‘ভোট তুমি প্রতিদিন এসো।’ ফ্যাক্টঃ বদরখালী সমিতির নির্বাচন।’
তবে, কাঙ্কিত পদে জয় পেতে মোটা দাগের টাকা খরচের অভিযোগ উঠলেও ভোট গ্রহণ কিন্তু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে ভোটারদের অভিমত। নির্বাচন সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক ছিল। ভোটাররাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।
নির্বাচনের দিন সরজমিন দেখা যায়, সমগ্র বদরখালী ও আশপাশের বাজার, স্কুলের মাঠে রঙ্গিন পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে চেয়ে গেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য -এটা আচরণবিধিতে পড়েনা। এটা নাকি যুগযুগ ধরে চলে আসছে। নির্বাচনে ১২ পদের বিপরীতে ৩২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। রাত তিনটার দিকে ফলাফল ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান।
প্রায় ১৫০০ সদস্যের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ১৩৩৪ জন।
এতে চেয়ার প্রতীক নিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন হাজী নুরুল আলম সিকদার (প্রাপ্ত ভোট-৬৭১)। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে দেলোয়ার হোছাইন এম এ পেয়েছেন ৬৪৪ ভোট। বাই সাইকেল প্রতীক নিয়ে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন আলী মোহাম্মদ কাজল (প্রাপ্তভোট-৭৬৪)। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি মই প্রতীক নিয়ে আনছারুল করিম পেয়েছেন ৫৫১ ভোট। এছাড়াও চাকা প্রতীক নিয়ে সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন নুরুল আমিন জনি (প্রাপ্তভোট-৭৮৬)। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী দেয়াল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ৫৩৩ ভোট। সম্পাদকীয় পদ ছাড়াও সমিতির পরিচালক (সদস্য) পদে নির্বাচিত করা হয়েছে ৯ জন সদস্যকে।
তারা হলেন, আবদুল আজিজ (বাল্ব প্রতীক, তার প্রাপ্ত ভোট ৫৬৯), হাফেজ আহমদ (তারা প্রতীক, প্রাপ্ত ভোট ৫৬১), জসিম উদ্দিন টিটু (মোমবাতি প্রতীক, প্রাপ্ত ৫২০), আহমদ আলী মাঝু (টেবিল প্রতীক, প্রাপ্ত ভোট ৫১২), মোহাম্মদ ইছহাক (চশমা প্রতীক, প্রাপ্ত ভোট ৪৮২), আলী আকবর (আম প্রতীক প্রাপ্ত ভোট ৪৭৫), কুতুব উদ্দিন (চিংড়ী প্রতীক, প্রাপ্ত ভোট ৪৬২), এ.এইচ.এম পারভেজ প্রকাশ মামুন (আপেল প্রতীক, প্রাপ্ত ভোট ৪৫৮) ও আবু তাহের (বাঘ প্রতীক, প্রাপ্ত ভোট ৪৪৬)।
নির্বাচনে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সম্পাদক ও পরিচালক (সদস্যসহ) মোট ১২টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
পাঠকের মতামত: