ডেস্ক রিপোর্ট ::
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এর বাইরে নিয়মিত শিক্ষক সংকট ছাড়াও কর্মরত শিক্ষকরা নানা ছুটিতে থাকায় পাঠদান মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের ২০ শতাংশ তথা প্রায় ৭০ হাজার ‘পুল টিচার’ নিয়োগের পরিকল্পনা করছে সরকার।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে যারা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী তাদেরকে গুনগত শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে এটা অর্জন করা সম্ভব হবে না। প্রশিক্ষণ ছাড়াও শিক্ষকরা নানা ধরনের ছুটিতে থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট থাকে। পাঠদান নিশ্চিত করতে আপৎকালীন ২০ শতাংশ রিজার্ভ টিচার নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ১০ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগ দিতে চেয়েছিলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব পাঠাতে বলেছে। পিইডিপি-৪ (চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি) কনসালট্যান্টকে প্রস্তাবনা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমেই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি-২০১৮ এর তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে পুরাতন ৩৮ হাজার ৯১৬টি ও নতুন জাতীয়করণকৃত স্কুল ২৬ হাজার ৬১৩টি। এসব স্কুলে শিক্ষক রয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ শিক্ষক ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৭ জন ও নারী শিক্ষক ২ লাখ ২৩ হাজার ৮১০ জন। পুরতান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৮.০২ ভাগ নারী শিক্ষক ও নতুন সরকারি স্কুলে এ হার ৫৬.০৪ ভাগ।
সরকার অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা, উপবৃত্তিসহ নানা কর্মসূচি নেওয়ার ফলে প্রায় শতভাগ শিশুই বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ঝরে পড়ার হার ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে না।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, নতুন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পর বাধ্যতামূলক দেড় বছরের ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (ডিপিএড) প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এছাড়া, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ (টিওটি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), চাহিদাভিত্তিক সাব-ক্লাস্টারসহ আরো স্বল্প মেয়াদী অনেক প্রশিক্ষণ নিতে হয়। পেশাগত দক্ষতা অর্জনে অনেক শিক্ষক বিএড, এমএডসহ নানা ধরণের কোর্স করেন। বর্তমানে পিইডিপি-৪ এর মাধ্যমে শিক্ষকদের বিদেশে মাস্টার্স কোর্স করানো হচ্ছে। ৬৮ ভাগ নারী শিক্ষক হওয়ায় তাদের অনেকে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকেন। অন্যান্য শিক্ষকরা বিভিন্ন ছুটি ভোগ করেন। বছরে গড়ে ২৭০ দিন স্কুল খোলা থাকে। শিক্ষকের অভাবে এই সময়ের মধ্যে কোর্স শেষ করা যায় না। শিক্ষক সংকটই দেশের প্রাথমিক শিক্ষার দুর্বলতার প্রধান কারণ।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে নতুন নিয়োগ নীতিমালায় শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করা হয়েছে। এছাড়া, শিশু শিক্ষার্থীদের গণিত ও বিজ্ঞানভীতি দূর করতে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ২০ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিয়মিত শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে পাঠদানের জন্য ২০ শতাংশ ‘রিজার্ভ টিচার’ নিয়োগের সিদ্বান্ত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শিক্ষক সংকট থাকবে না।
এর আগে এ ধরনের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১১ সালের আগস্ট মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ১১ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০১২ সালের ১২ আগস্ট ২৭ হাজার ৭২০ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭০১ জনকে জনকে নিয়োগ দেয় সরকার। বাকিদের ‘পুল শিক্ষক’ হিসেবে সাত দিন থেকে ছয় মাসের জন্য কোটার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয় (পুল শিক্ষকরা প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা সম্মানী পান, তাদের কোনো ছুটি নেই এবং তাদের নিয়োগ সাময়িক)। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে নতুন করে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন পুল শিক্ষকরা। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাদের চাকরি নিয়মিত করতে বাধ্য হয় সরকার।
সংশ্লিষ্টদের মতে, রিজার্ভ টিচারদের খণ্ডস্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া উচিত। নিয়োগে যাবতীয় শর্ত উল্লেখ করে দিতে হবে। মাসিক বেতনের পরিবর্তে থোক বরাদ্ধ দিতে হবে। না হলে ফের উদ্যোগটি বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
পাঠকের মতামত: