ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

‘প্রদীপ নিঃস্ব’ কোটিপতি স্ত্রী!

অনলাইন ডেস্ক :: নিজের অর্থ, কিন্তু জমি কিনেন শ্বশুরের নামে। পাঁচ বছরের মাথায় সেই জমিতে গড়েন ছয়তলা বাড়িও। যার সব টাকাই ছিল অবৈধ। আর এসব অবৈধ টাকা বৈধ করতে ফন্দি করেন আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। যা পরবর্তীতে স্ত্রীর নামে দানপত্র দেখিয়ে কৌশলে জায়গাসহ সম্পূর্ণ বাড়িটি শ্বশুর থেকে নিয়ে নেয় এ দম্পতি। যদিও শেষ পর্যন্ত এমন অবৈধ কাজের তথ্য পাওয়া যায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের অনুসন্ধানে।

শুধু এই বাড়িই নয়, অবৈধ অর্থ বৈধ করতে স্ত্রীর নামে কমিশন ও মৎস্য ব্যবসায় নাম লেখালেও পার পাচ্ছেন না প্রদীপ দম্পতি। এমন অবৈধ অর্থের প্রায় ৪ কোটি ৮ লাখ ১৮ হাজার ৮১০ টাকার বৈধ হিসেব দুদককে দেখাতে পারেননি প্রদীপ দম্পতি। যার সব অর্থই প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণের।

এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করবে দুদক। একই সাথে এ দম্পতির নামে থাকা ব্যাংক একাউন্টসহ সম্পদ জব্দ করতে আইনি ব্যবস্থাও নিতে যাচ্ছে দুদক কমিশন। চলতি সপ্তাহে এ দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়ার কথাও রয়েছে। দুদক প্রধান কার্যালয় ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গেল বুধবার (১২ আগস্ট) প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা প্রধান কার্যালয়ের কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। যাতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।

দুদকের অনুসন্ধান তথ্যে জানা যায়, ২০১৮ সালের শেষ দিকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রমাণ পায় দুদক। যার প্রেক্ষিতে দু’জনের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের সুপারিশ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। এরমধ্যে ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল স্ত্রী চুমকি কারণ সম্পদ বিবরণীর আদেশ গ্রহণ করলেও তা প্রায় একমাস পর দাখিল করেন। তার একাই সম্পদ বিবরণীর তথ্যে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকার স্থাবর এবং ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৮ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমোট ৪ কোটি ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৪ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করা হয়।

এছাড়া, চট্টগ্রাম সদর রাস রেজিস্ট্রি অফিসের দানপত্র মূলে (দলিল নং- ১১৮৮২) ২০১৩ সালের পহেলা আগস্ট নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন পাথরঘাটা এলাকায় জমিসহ একটি ছয়তলা বাড়ি চুমকি কারণ তার পিতা থেকে পান। কিন্তু নথিপত্র যাচাইকালে তার অন্য দুই ভাই ও এক বোনকে কোন বাড়ি দানপত্র করার কোন তথ্য পায়নি দুদক। বরং ওসি প্রদীপ দাশ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ অর্থ বৈধ করতেই এমন ফন্দি তৈরি করেন।

মূলত হস্তান্তরের মাধ্যমে তার শ্বশুরের নামে বাড়িটি নির্মাণ করে তা পরবর্তীতে নিজ স্ত্রীর নামে দানপত্র করে নিয়ে ভোগ দখল করছেন প্রদীপ দম্পতি।

দুদকের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওসি প্রদীপ দাশের স্ত্রী চুমকি কারণ ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে ২০০২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বেয়ালখালী উপজেলায় পাঁচটি পুকুর লিজ নিয়ে মৎস্য ব্যবসা করে দেড় কোটি টাকার আয়কর নথি প্রদান করেছেন। কিন্তু নথিপত্রে এর কোন সত্যতাই পাওয়া যায়নি।

এছাড়া চুমকি কারণ ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে কমিশন ব্যবসায়ী হিসেবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। যেখানে কমিশন ব্যবসা বাবদ মূলধন ১১ লাখ ২০ হাজার এবং ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় প্রদর্শন করেন। কিন্তু অনুসন্ধানে উক্ত আয়ের স্বপক্ষে কমিশন ব্যবসার লাইসেন্স কিংবা সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য যথাযথ কোন তথ্য দিতে পারেননি তিনি।

শুধু এসবই নয়, দুদকের অনুসন্ধানে চুমকি সর্বমোট ৪ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৯ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন এবং একই সময়ে তিনি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু উক্ত সম্পদের বিপরীতে সঞ্চয়, উপহার ও বাড়ি ভাড়া বাবদ বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় মাত্র ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকা। বাকি ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার হিসেব কোন উৎসই দেখাতে পারেননি ওসির স্ত্রী চুমকি।
এদিকে, স্ত্রী ছাড়াও পৃথক আরও একটি অনুসন্ধানে ওসি প্রদীপ দাশের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন দুদক সূত্র। যাতে শুধুমাত্র প্রদীপ দাশের বিরুদ্ধে ওই মামলা দায়েরের প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানা যায়। তবে পৃথক ওই অনুসন্ধানের প্রতিবেদন কবে নাগাদ শেষ হবে ওই বিষয়টি এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। যদিও অনুসন্ধান কর্মকর্তার দাবি, শীঘ্রই ওই প্রতিবেদনও দাখিল করা হবে।

অন্যদিকে, ওসি প্রদীপসহ তার স্ত্রীর নামে থাকা ব্যাংক একাউন্টসহ সকল অবৈধ সম্পদ জব্দ করা হবে জানিয়ে দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান গণমাধ্যমে বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে আদালতের অনুমতিক্রমে অর্জিত অবৈধ সম্পদগুলোও জব্দ করা হবে।

পাঠকের মতামত: