ডেস্ক নিউজ ::
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানদের পদত্যাগ করতে হচ্ছে না। স্বপদে থেকেই তারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। আর পদত্যাগ করলে বা অবসরের পরপরই উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন সরকারি কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো তাদের তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে না।
রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এক অনির্ধারিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তের কথা মৌখিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনের আগে এ সিদ্ধান্ত নিলো নির্বাচন কমিশন। সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) প্রথম ধাপের ৮৭টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন।
তবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই অনেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার শঙ্কায় তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, পদত্যাগ করেই প্রার্থী হতে হবে –এ ধরনের তথ্য ইসি থেকেই দেওয়া হয়েছিল। ওই বক্তব্যের পর প্রার্থিতা বাতিলের ভয়ে তাদের অনেকেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের ৮৭টি ও গত ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ১২৯ উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পদে থেকে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি, তাদের পদত্যাগ করতে হবে –এমন কথা আইনে নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘এ নিয়ে কিছু কনফিউশন ছিল। সেটি হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উচ্চ আদালত লাভজনক পদ বলার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু আদালতের কোনও রেফারেন্স পাইনি। তাই আমরা মনে করি, পদে থেকেই উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানরা নির্বাচন করতে পারবেন।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, উপজেলা পরিষদ আইন, ২০০৯ এর ৮(২) ধারায় যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। এ ধারার (ঙ) ও (চ) –এ উল্লেখ রয়েছে, প্রজাতন্ত্রের বা পরিষদের অন্য কোনও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনও লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত থাকেন এবং জাতীয় সংসদে সদস্য বা অন্য কোনও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বা সদস্য হন বা থাকেন, তারা নির্বাচনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
তারা আরও জানান, ইসি মনে করছে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানরা লাভজনক পদ নয়। উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব পদকে লাভজনক বলা হয়েছে –এমন কোনও তথ্য-উপাত্ত পায়নি কমিশন। এ ছাড়া, সর্বশেষ ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও পদে থেকেই নির্বাচন করেছিলেন চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানরা। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ সংক্রান্ত জটিলতায় বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। ওই ঘটনায় পর পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে হবে –এমনটিই আলোচনায় উঠে আসে। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে পদে থেকেই উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানরা প্রার্থী হলে তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে বিবেচিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইনি জটিলতা এড়াতে এ বিষয়ে ইসি কোনও লিখিত নির্দেশনা না দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি চাকুরিজীবীদের প্রার্থী হতে হলে অবসর থেকে তিন বছর অপেক্ষার কথা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ –এ উল্লেখ থাকলেও উপজেলা পরিষদ আইনে সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করলে বা অবসরে গেলে তাদের বিধান কী হবে তা আইনে উল্লেখ নেই। এ কারণে এ আইন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। অর্থাৎ পদত্যাগ করেই সরকারি কর্মকর্তারা এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
পাঠকের মতামত: