ডেস্ক নিউজ ::
আগামী নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসতে চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য পুরোদমে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। বিদ্রোহ দমন করে দলীয় একক প্রার্থী নিশ্চিত করা, ভোটের প্রচারণায় ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে ভোটারদের আকৃষ্ট করা, যুগোপযোগী ইশতেহার ঘোষণা, নির্বাচনী মাঠে বিরোধী জোটকে মোকাবেলা করাসহ মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ করছে ক্ষমতাসীনরা। বলা যায়, প্রচার কৌশল থেকে শুরু করে নির্বাচনের দিন ভোটের মাঠ নিজেদের দখলে রাখার যাবতীয় কর্মকৌশল চূড়ান্ত করে নিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিদিন দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলটির হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে নির্বাচন পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি ও উপকমিটি গঠন করা হয়েছে এবং নির্বাচনী কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় চার নেতাকে নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আওয়ামী লীগের ভোটের মাঠের সব প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। নির্বাচনী প্রচারণার কর্মকৌশল ঠিক হয়ে আছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বেঁধে দেয়া আনুষ্ঠানিক প্রচারণার সময়ের অপেক্ষা চলছে। প্রচারণার কার্যক্রম নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের শেষ মুহূর্তের শলাপরামর্শ ও বৈঠকও থেমে নেই। অন্যবারের মতো গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি থেকে এবারো প্রচারণা শুরু করবে দলটি। আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও উপকমিটি গঠিত হয়েছে আগেই। নির্বাচন পরিচালনা করতে দলটি ১৪০ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করেছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ২৬ নেতাকে ১৫টি কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যের ১৫টি উপকমিটি গঠিত হয়েছে। ৬৪ জেলায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নির্বাচনী টিমও গঠন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন ও এজেন্ট প্রশিক্ষণনের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রমও প্রায় গুছিয়ে এনেছে দলটি।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, এবার নির্বাচনীয় প্রচারণায় থাকছে নতুনত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইমেজ এবং নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও গুণাবলি নির্বাচনী প্রচারণায় বিশেষভাবে প্রাধান্য পাচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রাখতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকার বিষয়ে বেশি জোর দেবেন দলের নেতারা। সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে নানা সুযোগ-সুবিধা ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণ ভোটারদের কাছে টানার বিষয়ও গুরুত্ব পাচ্ছে প্রচারণায়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ঐক্যফ্রন্টকে ঘায়েল করতে যুদ্ধাপরাধ, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস ইস্যুকে ভোটারদের সামনে জোরালোভাবে তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নীতিগত জোরালো অবস্থানের কথা তুলে ধরা হবে দলের ইশতেহারেও। এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েক নেতাকে দলের মনোনয়ন দেয়া হয়নি নির্বাচনী এসব কার্যক্রম ভালো মতো পর্যবেক্ষণের জন্য। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও আহমদ হোসেনকে নির্বাচনী প্রস্তুতি ও নির্বাচনী কার্যক্রম ঠিকমতো চলছে কি না তা পর্যবেক্ষণের জন্য দলীয় প্রধান বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর ইসির প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটও ভোটের মাঠের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জোটের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণার জন্য ১৪ দল টিম গঠন করছে দেশের সব সংসদীয় এলাকায়। ১৬ ডিসেম্বর সব জেলায় বিজয় মঞ্চ তৈরি করে মাঠ দখলে রাখার চিন্তা করছে ক্ষমতাসীন এ জোটের নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, নির্বাচন হচ্ছে বাঙালির বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। সারা দেশে বিজয় মঞ্চ নির্মাণ করে সেখান থেকে ভোট চাওয়া হবে। ১৪ ডিসেম্বর থেকে বা এর আগে থেকে বিজয় মঞ্চের কাজ শুরু হবে।
বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু : ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই দিন টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করবেন তিনি। এরপর সিলেটে হজরত শাহজালাল রহ. ও হজরত শাহ পরাণ রহ: মাজার জিয়ারত করে সেখানে জনসভা করবেন তিনি। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলাসহ কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলায় নির্বাচনী জনসভা করার পরিকল্পনা রয়েছে শেখ হাসিনার। সফরসূচি চূড়ান্ত করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের গণভবনে ডেকে নিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান। এখন দিনক্ষণ ঠিক করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতারা।
প্রচারণায় তারকা চমক : রুপালি জগতের মানুষরা দর্শকদের কাছে সব সময়ই আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় চরিত্র। পর্দার প্রিয় অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের সামনাসামনি দেখা ও তাদের কথা শোনার আগ্রহ বরাবরই থাকে অনেকের। বেশির ভাগ তারকার ভাবমূর্তিও পরিচ্ছন্ন। বিষয়টিকে এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী প্রচারণায় থাকবেন সিনেমা ও নাট্যজগতের খ্যাতিমান তারকা। তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চাইবেন। দলের নির্বাচনী প্রচার উপকমিটি থেকে জানায়, চিত্রনায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ, নাট্যাভিনেতা জাহিদ হাসান, তার স্ত্রী নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী মৌ, অভিনেত্রী তারিন, তানভিন সুইটি, অরুণা বিশ^াস ও বিজরী বরকত উল্লাহসহ আরো অনেকে প্রচারণায় অংশ নেবেন। দলটি থেকে এবার নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন অভিনেত্রী তারানা হালিম, রোকেয়া প্রাচী, শমী কায়সার, জ্যোতিকা জোতি, চিত্রনায়ক শাকিল খান, খলনায়ক মনোয়ার হোসেন ডিপজল, সিদ্দিকুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, চলচ্চিত্র পরিচালক মাসুদ পথিক ও গীতিকার সুজন হাজং। তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রচারণায় অংশ নেবেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে প্রচারপত্র বিলি, পাড়া মহল্লায় প্রচারণা, পথ নাটক, গান ও নৃত্য পরিবেশনসহ অন্যান্য কর্মসূচি চালিয়ে তারা ভোটারদের মধ্যে ভোট চাইবেন।
পাঠকের মতামত: