ঢাকা,মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

নতুন ভোটারদের শুদ্ধতা যাচাই হবে রোহিঙ্গা–সার্ভারে ঢুকিয়ে

ডেস্ক নিউজ ::  রোহিঙ্গাদের এ দেশে ভোটার হওয়া ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নানা পদক্ষেপ নিলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। কিছুদিন পরপরই জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার থেকে বেরিয়ে আসছে রোহিঙ্গা ভোটার। এবার নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি। কক্সবাজারে শরণার্থীশিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের একটি তথ্যভান্ডার (সার্ভার) আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এখন যাঁরা নতুন ভোটার হবেন, শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য তাঁদের তথ্য ওই রোহিঙ্গা–সার্ভারের সঙ্গে মেলানো (ক্রস ম্যাচিং) হবে।

রোহিঙ্গা–সার্ভারে (তথ্যভান্ডার) তথ্য ঢোকানোর (ইনপুট) পর কোনো ব্যক্তির দেওয়া তথ্য সঠিক প্রমাণিত হলে তবেই সেই তথ্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সার্ভারে ঢোকানো হবে। এরপর তিনি বাংলাদেশের ভোটার হিসেবে বিবেচিত হবেন, পাবেন স্মার্ট কার্ড। সম্প্রতি ভোটার তথ্যভান্ডার থেকে কিছু রোহিঙ্গার নাম বেরিয়ে আসার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন এই কৌশল অবলম্বন করছে।

জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার পথ অনেকটাই বন্ধ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ইসি ৩২টি উপজেলায় নজরদারি করছে। সে জন্য রোহিঙ্গারা অন্য এলাকায় গিয়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভোটার হয়ে যাচ্ছে। তাই নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে তথ্য ক্রস ম্যাচিংয়ের জন্য রোহিঙ্গা–সার্ভারে ঢোকানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, এখন ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। মাঠকর্মীরা প্রথমে ব্যক্তির ছবি, চোখের আইরিশ, আঙুলের ছাপ ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে উপজেলা সার্ভারে রাখবেন। দ্বিতীয় ধাপে সেই তথ্য ক্রস ম্যাচিংয়ের জন্য পাঠানো হবে রোহিঙ্গা-সার্ভারে। ওই সার্ভারে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিকের তথ্য আছে।

ইসি ২০০৮ সালে প্রকাশ করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। সেখানে ভোটার সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি। ২০১১ সালে এসে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর তদন্ত করে জানায়, তালিকায় ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভোটার আছে। এরপর ইসি যাচাই-বাছাই করে ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিকের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়। ২০১৬ সালে আরেক দফা যাচাই-বাছাই করে সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গার নাম বাদ দেওয়া হয়।

একই সময়ে ইসি চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ৩২টি রোহিঙ্গাপ্রবণ উপজেলা চিহ্নিত করে। এসব এলাকায় ভোটারের তথ্য যাচাইয়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রধান করে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। এসব এলাকায় ভোটার হওয়ার জন্য বিশেষ ফরম চালু করা হয়, যেখানে পিতামহের নাম-ঠিকানাসহ অতিরিক্ত কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এত সব ব্যবস্থার পরও সম্প্রতি লাকি নামের এক রোহিঙ্গা নারী এবং নুর মোহাম্মদ নামের আরেক রোহিঙ্গা ডাকাতের তথ্য ভোটার তথ্যভান্ডারে পাওয়া গেছে। দুদিন আগে আরও ৪৬ জন রোহিঙ্গার তথ্য ভোটার তথ্যভান্ডারে পাওয়া গেছে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোহিঙ্গারা নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করে করে ভোটার হচ্ছেন। এর সঙ্গে স্থানীয় লোকজন ও ইসির মাঠকর্মীরা জড়িত। মাঠপর্যায়ে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের অনেকে অন্য অপারেটরের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে জালিয়াতির কাজ করেছেন বলেও ইসির কাছে অভিযোগ আছে। সে জন্য ইসি মাঠপর্যায়ের ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের নতুন পাসওয়ার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে।

পাঠকের মতামত: