নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া-পেকুয়া :: চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন অনলাইন, প্রিন্ট পত্রিকায় গত ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর ‘‘পেকুয়া, চকরিয়া ও কুতুবদিয়ায় সিপিপি’র কর্মসূচীতে অনিয়ম-দূর্নীতি’’ শীর্ষক একটি তথ্যনির্ভর ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশিত হলে কক্সবাজারের পুরো উপকূলজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ওই সংবাদটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ধরনের বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ করায় অনালাইন ও প্রিন্ট মিডিয়া কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে সাধুবাদ জানিয়েছেন পেকুয়া, চকরিয়ার ও কুতুবদিয়ার সর্বমহল। এদিকে এ তিন উপজেলায় সিপিপির কর্মসূচী বাস্তবায়নে অনিয়ম-দূর্নীতি নিয়ে তথ্য নির্ভর সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার অভিযুক্ত কর্মকর্তা মুনীর চৌধুরী তার অনিয়ম-দূর্নীতি এবং সরকারী টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সংবাদটি প্রকাশের পর পত্রিকার কাটিং নিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিপিপির কর্মকর্তা মুনীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পেকুয়া উপজেলা সচেতন কয়েকজন ব্যক্তি। এছাড়াও ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়, সিপিপির সদর দফতরের পরিচালক (প্রশাসন) এর কাছেও লিখিত অভিযৈাগ প্রেরণ করা হয়েছে।
দুদকের চেয়ারম্যান বরাবরে পাঠানো অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, সরকারের ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ অর্থায়নে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি) এর কর্মসূচী বাস্তবায়নে কক্সবাজার জেলার তিন উপকূলীয় দূর্যোগ প্রবণ উপজেলা পেকুয়া, চকরিয়া ও কুতুবদিয়ার দায়িত্বে থাকা সিপিপি কর্মকর্তা মুনীর চৌধুরীর অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে বিগত ১৪ বছর ধরে সরকারী অর্থ আত্মসাত করে আসছেন। সিপিপি কর্মকর্তা মুনীর চৌধুরী একাই চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এই তিন উপজেলায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকার সুযোগকে পুঁিজ করে সিপিপি কর্মকর্তা মুনীর চৌধুরী জড়িয়ে পড়েছে নানান ধরনের অনিয়ম ও দূর্নীতিতে। প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী বাস্তবায়নে সরকারের ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি যৌথভাবে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও নামমাত্র কর্মসূচী পালন করে সিংহভাগ বরাদ্দ লুটেরও অভিযোগ রয়েছে সিপিপি কর্মকর্তা মুনীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারী সিপিপির সদর দফতর থেকে পেকুয়া, চকরিয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি মহড়া অনুষ্টানের জন্য (প্রতি উপজেলায়) ১লাখ ৫ হাজার টাকা করে সর্বমোট ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা, ২৩টি ইউনিয়নে দূর্যোগ বিষয়ে সচেতনতা র্যালী করার জন্য প্রতি ইউনিয়নে ৪ হাজার টাকা করে ৯২ হাজার টাকা, প্রতিটি স্বেচ্চাসেবক প্রশিক্ষণের জন্য ৪২ হাজার ৩৪৫ টাকা, স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণে নিয়োজিত প্রতিটি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষকদের জন্য ৫’শ টাকা হারে ভাতা, একই ভাবে প্রতিটি প্রশিক্ষণে সিপিপির উপজেলা টিম লিডারদের জন্য ৩’শ টাকা ও ইউনিয়ন টিম লিডারদের জন্য ২’শ টাকা হারে সম্মানী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছর মে মাসে পেকুয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় মহড়া অনুষ্টান মগনামা ইউনিয়নে করা হয়। তবে পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে ৫ টি ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির সচেতনতা বাড়াতে র্যালীর করা হয়নি। কুতুবদিয়া উপজেলার ৬ ইউনিয়নেও র্যালীর আয়োজন করা হয়নি। চকরিয়া উপজেলার ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ২/১টিতে র্যালীর আয়োজন করা হলেও বেশিরভাগ ইউনিয়নে র্যালীর আয়োজন করা হয়নি। এভাবে তিন উপজেলার ২৩ টি ইউনিয়নের অধিকাংশতে র্যালীর আয়োজন করা বরাদ্দ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও তিন উপজেলায় স্বেচ্চাসেবকদের ১৫টি প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয় চলতি বছরে। এসব প্রশিক্ষণে ওই সিপিপি কর্মকর্তা উপজেলা সমূহের কোন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষক হিসেবে না এনে নিজেই প্রশিক্ষণে লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই হিসাবে মুনীর চৌধুরী প্রতিটি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক বাবদ ৫’শ টাকা করে ৭ হাজার ৫’শ টাকার সম্মানী অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন।
জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি মহড়া করলেও কুতুবদিয়া ও চকরিয়া উপজেলায় নামেমাত্র মহড়া বা ফটো সেশন করে মহড়া বাবদ বরাদ্দের সিংহভাগই আত্মসাৎ করা হয়েছে। তিন উপজেলায় স্বেচ্চাসেবকদের জন্য আয়োজিদ ট্রেনিং কর্মসূর্চীতেও বরাদ্দ নিয়েও নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে মুনীর চৌধুরী বিরুদ্ধে। প্রতি স্বেচাসেবক প্রশিক্ষণে ৪২হাজার ৩’শ ৭৫ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বরাদ্দ অনুযায়ী ব্যয় করেনি সিপিপি কর্মকর্তা। এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির চিত্র শুধুমাত্র চলতি অর্থবছরের। সে হিসেবে ২০০৪ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৮ ইংরেজী ডিসেম্বর পর্যন্ত চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী বাস্তবায়নে সরকারের ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি যৌথভাবে লাখ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দিলেও এই তিন উপজেলায় নামেমাত্র কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে মুনীর চৌধুরী বরাদ্দের সিংহভাগই আত্মসাত করে নিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: