ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারতেন না, দম বন্ধ হয়ে যেত: মিন্নি

অনলাইন ডেস্ক ::   দুই মাসের সংসারে রিফাতকে নিয়ে বহুদূর যাওয়ার স্বপ্ন ‍বুনছিলেন মিন্নি। একজন হয়ে উঠেছিলেন আরেকজনের অতি আপন। দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারতেন না, দম বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু তাদের এই সুখ সইল না নরপশুদের। ঘাতকদের চাপাতি রিফাতকে ক্ষত-বিক্ষত করার পাশাপাশি স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল নববধূ মিন্নির। বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকাশ্যে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে। সবাই এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছেন।

বুধবার এ হত্যাকাণ্ডের পর বৃহস্পতিবার এ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন স্বামী হারা মিন্নি। এ সময় হত্যাকাণ্ডের সেই নির্মম ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।

নরপশুরা চোখের সামনে রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে।

বিয়ের পর রিফাতের সঙ্গে ভালোই কাটছিল সময়টা জানিয়ে মিন্নি বলেন, ‘বিয়ে হইছে দুই মাস হয়। আমরা দুজনে খুব ভালোই ছিলাম। খুব সুখেই ছিলাম। একজন আরেকজনরে ছাড়া থাকতেই পারতাম না। কিন্তু নয়নের ডিস্টার্ব করা কমেই না। আমাকে ডিস্টার্ব করতেই থাকে। আমার স্বামীও জানত। এখন এই নিয়ে কোনো ঝামেলা হইছে কিনা জানি না। আমি কলেজে গেছিলাম ও আমারে আনতে গেছিল। পরে আমরা কলেজ থেকে বের হই, তখন কিছু ছেলে এসে রিফাতকে আক্রমণ করে, মারা শুরু করে। আমি অনেক চেষ্টা করি ফেরানোর। কিন্ত পারি না। পরে রামদা নিয়া আক্রমণ করে; আমি অনেক চেষ্টা করছি, আমি অস্ত্র ধরছি, তাদের ধরছি, চিৎকার করছি। কেউ আগায়ে আসে নাই, কেউ একটু হেল্প করে নাই। আমি খুব আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার স্বামীকে বাঁচাইতে পারি নাই। আমি একলা হাসপাতালে নিয়া গেছি।’

মিন্নি জানান, রিফাতের সঙ্গে দুই মাস আগে তার বিয়ে হয়। তবে এর প্রায় বছরখানেক আগে থেকেই সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড তাকে উত্ত্যক্ত করত। মিন্নি বলেন, ‘রিফাতের সঙ্গে আমার দুই থেকে আড়াই বছরের সম্পর্ক। আর এই নয়ন আমাকে ডিস্টার্ব করে এক বছরের মতো হয়েছে। ও আগে অল্প বিরক্ত করত, তার পর দিনের পর দিন বাড়তে থাকে। ফোনে কথা বলতে হইবে, তারপর আমি রিকশায় গেলে রিকশায় লাফ দিয়ে উঠত। এক জায়গায় গেলে ওই জায়গা গিয়ে ডিস্টার্ব করত। ওই জায়গায় গিয়ে হুমকি-ধামকি দিত।’

মিন্নিকে নয়ন মেরে ফেলার হুমকিও দেন। এমনটি জানিয়ে মিন্নি বলেন, নয়ন বলত তার সঙ্গে কথা না বললে মাইরে ফালাবে। আমাকে জানে শেষ করে ফেলবে। পরে আমি অনেক ভয় পাই। আমার বাসার সবার সঙ্গে শেয়ার করি। পরে আমার আব্বু আমার কাকাদের সঙ্গে আলাপ করে। পরে রিফাতের সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়।’

জড়িতদের শাস্তির বিষয়ে মিন্নি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমি নয়ন, রিফাত ফরাজী, রেশান ফরাজী আরও ওই জায়গায় যারা ছিল প্রত্যেকের ফাঁসি চাই।’

বিয়ের আগে নয়নের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা বা আর কেউ বিরক্ত করত কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে রিফাতের স্ত্রী বলেন, ‘কোনো সম্পর্ক ছিল না। ওই আমাকে হুমকি-ধামকি দিত, বিরক্ত করত। আমি ভয়ে কারও কাছে বলতাম না, পরে আমি বলছি।’

নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।

পাঠকের মতামত: