ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

তামাক কোম্পানীর জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
শতভাগ মালিকানাধীন তামাক কোম্পানীর জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে কক্সবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা মানববন্ধন করেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারী) সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে ক্ষতিগ্রস্ত তামাক চাষীরা এই মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে দেশীয় মালিকানাধীন সিগারেট কোম্পানী বন্ধের কারণে উৎপাদিত তামাক বিক্রির নিশ্চয়তা ও সুরক্ষার দাবি সম্বলিত পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় পাঁচ শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত চাষী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এসময় ক্ষতিগ্রস্ত তামাক চাষীরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা গরিব চাষী। কিন্তু আজকে চাষ থেকে আমরা দূরে আছি। আমরা তামাক চাষ করতে পারলেও বিক্রি করতে পারছি না। দেশে বর্তমানে শুধুমাত্র দুটি বিদেশী কোম্পানি এবং কয়েকটি কোম্পানি তামাক ক্রয় করে। কিন্তু আজ থেকে ১০ বছর আগেও আমরা প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানির কাছে ন্যায্য মূল্যে তামাক বিক্রি করতাম। এসব শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীর নিম্নমানের সিগারেট বানাত। আমরা তাদের জন্য তামাক উৎপাদন করে দিতাম।’
মানববন্ধনে আসা চকরিয়ার মানিকপুরের চাষী শামসু মেম্বার বলেন, ‘বিদেশী কোম্পানী শুধুমাত্র উচ্চমানের সিগারেট বানাত। তাই আমাদের তামাক পাতা দেশীয় কোম্পানীর কাছে বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন বিদেশী কোম্পানী বিশেষত বিএটি নিম্নমানের সিগারেট উৎপাদন করে পুরো বাজার দখল করে নিয়েছে। তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীগুলো পেরে উঠছেনা। যার ফলে আস্তে আস্তে বাজার হারাতে হারাতে দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীগুলো নিঃস্ব হয়ে গেছে। বর্তমানে ৩০টি শতভাগ মালিকানাধীন কোম্পানীর মধ্যে অধিকাংশ কারখানা কোন মতে চলছে। বন্ধ বা উৎপাদন করতে পারছে না অনেক দেশীয় কোম্পানী। যার জন্য তারা আর আমাদের কাছ থেকে তামাক নিচ্ছে না। এই অবস্থায় আমরা পরিবার নিয়ে পথে বসার উপক্রম সৃষ্টি হয়েছে।’
বান্দরবানের লামার চাষী ছিলামং ও নাইক্ষ্যংছড়ির চাষী শফিউল করিম প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘আপনি খেঁাজ খবর নিলে জানতে পারবেন, এদেশে আগে আগে কত তামাক উৎপাদন বিক্রয় হচ্ছে। আর এই তামাক কারা নিচ্ছে, কেন অন্য কোম্পানীগুলো নিচ্ছে না তা অনুগ্রহ করে ক্ষতিয়ে দেখুন।’
লামার আরেক চাষী এনামুল হক মেম্বার বলেন, ‘২০১৭—২০১৮ অর্থ বছরে বাজেটে আপনি ও মাননীয় অর্থ মন্ত্রী ওয়াদা করেছিলেন এবং সংসদে বিল পাস করেছিলেন যে শতভাগ মালিকানাধীন কোম্পানীর জন্য আলাদা নীতিমালা তৈরি করে যাতে তারা উৎপাদনে ফিরে এসে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে। তারা উৎপাদনে গিয়ে বাণিজ্য করতে পারলে আমাদের কাছ থেকে তামাক নিবে। যাতে আমাদের পরিবার দু’মুঠো ভাত খেতে পারে। তাছাড়া ২০১৮ সালে বাজেটে শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পনীর জন্য মহান জাতীয় সংসদে নীতিমালা পাস হয়েছিল, অনুমোদন হয়েছিল। সেটিও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। একটি কুচক্রী মহল এটি বাস্তবায়ন করতে দেয়নি।’
মানববন্ধনে চাষিরা প্রধানমন্ত্রীর সুনজর কামনা করে বলেন, ‘এই দেশে কি শুধু একটি মাত্র বিদেশী কোম্পানী থাকবে নাকি ৩০টি দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী থাকবে? দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী যদি ব্যবসা—বাণিজ্য করতে পারে তাহলে দূর হবে বেকারত্ব। এবং আমরাও সবসময় তাদের কাছে তামাক বিক্রি করে উপকৃত হতে পারবো। এছাড়া দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী কখনো দেশ ছেড়ে যাবে না। আর অনেক বিদেশী কোম্পানী দেশে এসে ব্যবসা করেছে, মুনাফা করেছে তারপর চলে গেছে। তারা এদেশে কিছুই রাখেনি। কিছুদিন আগে একটি বিদেশী কোম্পানী এ দেশ থেকে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে চলে গেছে। তাই দেশের অর্থকরী ফসল সিগারেটের বাজার থেকে সরকার প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে তা শুধু বিদেশী কোম্পানীর হাতে দেয়া উচিত হবে না। তামাক চাষ করে প্রতি বছর বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তাই আমাদের সুযোগ দিন। আমরা উৎপাদনে যেতে চাই। আমাদের দেশের মাটি উর্বর। আমরা কৃষি কাজে ফিরে যেতে চাই। আমরা কাজ করে পরিবার নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেতে চাই। এ জন্য শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী বাঁচানোর জন্য নীতিমালা বাস্তবায়ন করুন।’

পাঠকের মতামত: