ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ছাত্রীর সন্তান কোলে নিয়ে ক্লাস নিলেন শিক্ষক!

অনলাইন ডেস্ক :: ঘটনাটি আজ সকাল সাড়ে ১০ টার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিনাইর অঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রীর কন্যাশিশুকে কোলে নিয়ে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করছিলেন পঙ্কজ মধু (৪৫) নামের এক শিক্ষক। ছাত্রীটি সন্তানকে কোলে নিয়ে ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছিলেন না তাই শিক্ষার্থীর সুবিধার্থেই তিনি এ কাজ করেন।

রোববার (৩ অক্টোবর) দুপুরের পর চিনাইর অঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের এ ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।

সম্প্রতি দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষক পঙ্কজ মধু জানতে পারেন দশম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী স্কুলে আসে নি। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। পরে ওই শিক্ষার্থীকে স্কুলে আসার জন্য খবর দেয়া হলে আজ সকালে তিনি সন্তানসহ স্কুলে আসেন।

কিন্তু সন্তানের জন্য ক্লাসের পড়ায় মনযোগ দিতে পারছিলেন না ওই ছাত্রী। তাই ছাত্রীর মনোযোগের সুবিধার্থেই এক পর্যায়ে শিশুটিকে কোলে নিয়েই পাঠদান করতে শুরু করেন শিক্ষক পঙ্কজ মধু। তখনই কেউ একজন এ দৃশ্যের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাইরাল হয় ছবিটি।

জিজ্ঞেস করা হলে শিক্ষক পঙ্কজ মধু জানান, ছবিটি ফেসবুকে কীভাবে ছড়িয়ে পড়লো তা আমার জানা নাই। আর ভাইরাল হওয়ার জন্য আমি এটা করি নি। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা আমি সবসময়ই চিন্তা করি। আমি যখন জানতে পারলাম লকডাউনে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে স্কুলে আসে পারেনি তখন আমি তার সাথে যোগাযোগ করলাম। এবং আজকে সে তার বর ও সন্তানকে নিয়ে স্কুলে আসে। তার কোলের শিশুকে নিয়েই শ্রেণীকক্ষে বসে সে। কিন্তু বাচ্চার জন্য পড়ায় মনোযোগ দিতে না পারায়, আমিই বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বাকি ক্লাস শেষ করি।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকতা খুবই পবিত্র একটি পেশা, আমি আমার পেশা ও শিক্ষার্থীদের ভালোবাসি। আমি গত ২১ বছর যাবত শিক্ষকতা করছি, সবসময় চেষ্টা করেছি একজন শিক্ষক হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন স্থানীয় এক যুকক। রবিবার দুপুরে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রীর সন্তান কোলে নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালাচ্ছেন চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক পঙ্কজ মধু স্যার। সন্তান কোলে নিয়ে পাঠে মনযোগী হতে না পারা শিক্ষার্থীর সুবিধার্থে তিনি এ কাজ করেছেন। স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসা।’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘কিন্তু, আমাদের গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে এখনো পুরোপুরিভাবে বাল্য বিয়ে রোধ সম্ভব হচ্ছে না। এর পুরোপুরি দায় নিতে হবে ইউনিয়ন পরিষদ অর্থাৎ মেম্বার চেয়ারম্যানের, পরিষদে কর্মরত উদ্যোক্তা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে। নিকাহ রেজিস্ট্রারও এর দায় এড়াতে পারে না। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী নিশ্চয় ১৮ বছর কিংবা ততোর্ধ্ব না।’

এ লেখাটি অনেকে কপি করে বিভিন্ন গ্রুপ ও নিজেদের আইডিতে দিয়েছেন। সেখানে অনেকেই শিক্ষকের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি বাল্য বিয়ে নিয়ে সমালোচনা করেছেন। রৌণক রুবেল নামে একজন লিখেছেন, ‘স্যারের প্রতি আরো রেস্পেক্ট বেড়ে গেলো। তার প্রতি শ্রদ্ধা ও সালাম। তবে এর চেয়েও অসংগতি এবং দুখের বিষয় হলো দশম শ্রেণির ছাত্রীর বাচ্চাসহ ক্লাস করা। … শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ আমরা প্রত্যেকেই এগিয়ে আসলেই এই বাল্যবিবাহ নামক মারাত্মক ব্যাধি এবং অন্যায় প্রতিরোধ সম্ভব।’

মুক্তি খান নামে একজন লিখেছেন, ‘এর দায়ভার নিতে হবে ইউনিয়ন পরিষদকে। এদের সঠিক তদন্ত করা উচিত।’-আগামীনিউজ

পাঠকের মতামত: