বশির আলমামুন, চট্রাগ্রাম থেকে :::
জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম জেলার সীমানা নির্ধারণ করেছে জেলা প্রশাসন। এতে পুরো জেলাকে ১৫টি ইউনিটে ভাগ করা হয়েছে। মহানগরীসহ চট্টগ্রাম জেলার ১৪ উপজেলার ১৬ সংসদ সদস্য ছাড়া অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের ভোটে নির্বাচিত হবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এছাড়াও জেলা পরিষদ পরিচালনার জন্য ১৫ জন সদস্য ও ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচক মন্ডলীর ভোটে নির্বাচিত হবেন।
যেহেতু জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ এ পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও ৫ জন মহিলা সদস্যের সমন্বয়ে পরিষদ গঠনের করার কথা বলা আছে। সেহেতু স্ব স্ব এলাকায় নির্বাচিত ‘ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার), ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সচিব শাব্বির ইকবাল বলেন, আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এর ১৬ ধারা এবং জেলা পরিষদ (ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণ) বিধিমালা ২০১৬ এর ৪নং বিধি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ, অধিশাখার নির্দেশনা মোতাবেক চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি বর্ণিত আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন পৌরসভা ও ইউনিয়নসমূহের সর্বশেষ নির্ধারিত সীমানার আলোকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিভক্ত করে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেন। ওই তালিকাটি বিজ্ঞাপন আকারে পত্রিকায় ছাপানো হয়।
বিজ্ঞাপনে বলা ছিল, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে কারো কোন আপত্তি/পরামর্শ থাকলে জানানোর জন্য। কিন্তু জেলা প্রশাসক কারো কোন আপত্তি না থাকায় উক্ত আইনের ৬ বিধির ১ ও ২ উপবিধি মোতাবেক চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেন।
পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাফফর আহমদ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় ১৪টি উপজেলা। এই ১৪ উপজেলাকে ১৪টি ইউনিটে রেখে মহানগরকে একটি ইউনিট ভাগ করে ১৫টি ইউনিট করলে ভাল হতো। পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সীমানা নির্ধারণীর এক সভায় আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম পটিয়া উপজেলাকে যাতে একটি ইউনিটে রাখা হয়। কিন্তু এখন আমার উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন ওয়ার্ড চন্দনাইশ উপজেলায় নিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে অব্যশ্যই একজন সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য ওইদিকে চলে যাবে। এক্ষেত্রে বরাদ্দের ক্ষেত্রে যাতে পটিয়া বৈষম্যের শিকার না হয়, সেদিকে সুদৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
সীতাকুন্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমানা নির্ধারণ করেছে। জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম জেলাকে ১৫টি ইউনিটে ভাগ করেছে। আমার উপজেলার সাথে মিরসরাই উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন যোগ করেছে। সরকারের উন্নয়নকাজকে তরান্বিত করতে জেলা পরিষদে জনপ্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচন করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, সামনে জেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমানা নির্ধারণ হয়েছে। আমার উপজেলাকে একটি সাধারণ ওয়ার্ড করেছে।
জেলা প্রশাসনের তালিকায়- চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার মিরসরাই, বারৈয়ারহাট, করেরহাট, জোরারগঞ্জ, ধুম, ওসমানপুর, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, মঘাদিয়া, গিঙ্গুলী ও খৈয়াছরা ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ১নং সাধারণ ওয়ার্ড।
সীতাকুন্ড উপজেলার সীতাকুন্ড পৌরসভা এবং সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, মুরাদপুর, বাড়বকুন্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারি, সলিমপুর ইউনিয়ন, এবং মিরসরাই উপজেলার মায়ানি হাইতকান্দি, ওয়াহেদপুর ও সাহেরখালী ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ২নং সাধারণ ওয়ার্ড।সন্দ্বীপ উপজেলার সন্দ্বীপ পৌরসভা এবং গাছুয়া, সন্তোষপুর, দীর্ঘাপাড়, কালাপানিয়া, হরিশপুর, বাউরিয়া, মুছাপুর, রহমতপুর, আজিমপুর, মাইটভাঙ্গা, সারিকাইত, মগধরা, হারামিয়া, আমানউল্লা ও উড়িরচর ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৩নং সাধারণ ওয়ার্ড।
উল্লেখিত ১, ২ ও ৩নং সাধারণ ওয়ার্ড নিয়ে গঠন করা হয়েছে ১নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড।
এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ পাহাড়তলী, জালালাবাদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, মোহরা, পূর্ব ষোলশহর, পশ্চিম ষোলশহর, শুলকবহর, উত্তর পাহাড়তলী, উত্তর কাট্টলী, দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, পাহাড়তলী, লালখানবাজার, বাগমনিরাম, চকবাজার, পশ্চিম বাকলিয়া, পূর্ব বাকলিয়া, দক্ষিণ বাকলিয়া, দেওয়ানবাজার, জামালখান, এনায়েতবাজার, উত্তর পাঠানটুলী, উত্তর আগ্রাবাদ, রামপুর, উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, পাঠানটুলী, পশ্চিম মাদারবাড়ী, পূর্ব মাদারবাড়ী, আলকরণ, আন্দরকিল্লা, ফিরিঙ্গীবাজার, পাথরঘাটা, বক্সিরহাট, গোসাইলডাঙ্গা, উত্তর মধ্যম হালিশশহর, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, উত্তর পতেঙ্গা, দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড এবং হাটহাজারী উপজেলাধীন মেখল, গড়দুয়ারা, উত্তর মাদার্শা, ফতেপুর, চিকনদন্ডী, দক্ষিণ মার্দাশা, শিকারপুর ও বুড়িশ্চর ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৪নং সাধারণ ওয়ার্ড।
হাটহাজারী উপজেলার হাটহাজারী পৌরসভা এবং ফরহাদাবাদ, ধলই, মির্জাপুর, গুমানমর্দ্দন, নাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী ইউনিয়ন এবং ফটিকছড়ি উপজেলার সুয়াবিল, রক্তপুর, জাফতনগর, ধর্মপুর, সমিতিরহাট ও আবদুলাপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৫নং সাধারণ ওয়ার্ড।ফটিকছড়ি উপজেলার ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট পৌরসভা এবং বাগানবাজার দাঁতমারা, নারায়ানহাট, ভুজপুর, হারুয়াছড়ি, পাইন্দং, কাঞ্চননগর, সুন্দরপুর, লেলাং, নানুপুর ও রোসাংগিরী ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৬নং সাধারণ ওয়ার্ড।
উল্লেখিত ৪, ৫ ও ৬নং সাধারণ ওয়ার্ড নিয়ে গঠন করা হয়েছে ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড।
অপরদিকে, রাউজান উপজেলার রাউজান পৌরসভা এবং হলদিয়া, ডাবুয়া, রাউজান, চিকদাইর গহিরা, বিনাজুরি, কদলপুর, পাহাড়তলী, পূর্ব গুজরা, পশ্চিম গুজরা, উরকিরচর, নোয়াপাড়া, বাগোয়ান ও নোয়াজিষপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৭নং সাধারণ ওয়ার্ড।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা এবং রাজানগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, মরিয়ম নগর, পারুয়া, পোমরা, বেতাগী, সরফভাটা, শিলক, পদুয়া, চন্দ্রঘোনা, কোদালা, ইসলামপুর, দক্ষিণ রাজানগর ও লালানগর ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৮নং সাধারণ ওয়ার্ড।বোয়ালখালী উপজেলার বোয়ালখালী পৌরসভা এবং কধুরখীল, পশ্চিম গোমদন্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ, শ্রীপুর খরণদ্বীপ, আমুচিয়া, আহলা করলণডেঙ্গা ইউনিয়ন এবং পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ, ধলঘাট, কেলিশহর, কোলাগাঁও ও দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৯নং সাধারণ ওয়ার্ড।
উল্লেখিত ৭, ৮ ও ৯নং সাধারণ ওয়ার্ড নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড।
অন্যদিকে, পটিয়া উপজেলার পটিয়া পৌরসভা এবং চরলক্ষ্যা, জুলধা, চরপাথরঘাটা, বড়উঠান, শিকলবাহা, কুসুমপুরা, জিরি, কাশিয়াইশ, আশিয়া, জঙ্গলখাইন, বড়লিয়া, হাইদগাঁও ও ভাটিখাইন ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ১০নং সাধারণ ওয়ার্ড।চন্দনাইশ উপজেলার চন্দনাইশ পৌরসভা এবং কাঞ্চনাবাদ, জোয়ারা, বরকল, বরমা, বৈলতলী, সাতবাড়িয়া, হাশিমপুর, দোহাজারী, ধোপাছড়ি ইউনিয়ন এবং পটিয়া উপজেলার ছনহরা, কচুয়াই, খরনা ও শোভনদণ্ডী ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ১১নং সাধারণ ওয়ার্ড।আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, বারশত, রায়পুর, বটতলী, বরুমছড়া, বারখাইন, আনোয়ারা সদর, চাতরী, পরৈকোড়া, হাইলধর, জুঁইদন্ডী ইউনিয়ন এবং বাঁশখালী উপজেলার পুকরিয়া ও সাধনপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ১২নং সাধারণ ওয়ার্ড।
উল্লেখিত ১০, ১১ ও ১২নং সাধারণ ওয়ার্ড নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৪নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড।
বাঁশখালী উপজেলার বাঁশখালী পৌরসভা এবং খানখানাবাদ, বৈলছড়ি, কাথারিয়া, বাহারছড়া, কালিপুর, সরল, শীলকুপ, চাম্বল, গন্ডামারা, শেখেরখীল, পুঁইছড়ি ও ছনুয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ১৩নং সাধারণ ওয়ার্ড।সাতকানিয়া উপজেলার সাতকানিয়া পৌরসভা এবং পুরানগড়, চরতী, খাগরিয়া, নলুয়া, কাঞ্চনা, আমিলাইষ, এওচিয়া, মাদার্শা, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা, কালিয়াইশ, ধর্মপুর ও সাতকানিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ১৪নং সাধারণ ওয়ার্ড।
লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া, আমিরাবাদ, পদুয়া, চরম্বা, কলাউজান, লোহাগাড়া, পুটিবিলা, চুনতী, আধুনগর ইউনিয়ন এবং সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া, ছদাহা, কেঁওচিয়া ও বাহালিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে ১৫নং সাধারণ ওয়ার্ড।
উল্লেখিত ১৩, ১৪ ও ১৫নং সাধারণ ওয়ার্ড নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৫নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড।
হাটাহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী বলেন, সীমানা নির্ধারণ হয়েছে শুনেছি। তবে আমাদের কোন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে, তা এখনো জানি না। আমাদের উপজেলাকে কোন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে, তা লিখিতভাবে জানাবে বলে জানতে পেরেছি। ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার বিধানটি সাধুবাদযোগ্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে যে নিদের্শনা আসবে, সে নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মতামত: