ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামে ফ্রিতে মেট্রোরেল করে দিয়ে সাগরপারে উপশহর চায় চীন

অনলাইন ডেস্ক ::
চীনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চাইনিজ রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসি) গত বছরের ২১শে মে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করার প্রস্তাব দিয়েছিল। এই বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছে তারা। তবে এবার শুধু সম্ভাব্যতা যাচাই নয়, মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্য ৮৬ হাজার কোটি থেকে এক লাখ কোটি টাকার সবটাই অনুদান হিসেবে দেয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। বিনিময়ে তারা চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সমুদ্রের পারে প্রায় ৫০ হাজার একর জমির ওপর একটি উপশহর করতে চায়। এই উপশহরের আয়ের একটা অংশও তারা বাংলাদেশকে দেবে। এ প্রস্তাবের বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)-এর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, চীনের ৪টি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ফ্রিতে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। বিনিময়ে তারা মিরসরাই থেকে বে- টার্মিনাল পর্যন্ত ৫০ হাজার একর জায়গা নিয়ে উপশহর করতে চায়। এই উপশহরও তারা সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে করবে।

আর সেটা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে। সেখানে তারা সব ধরনের আধুনিক নাগরিক সুবিধা সংবলিত বাসস্থানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো করবে। সেখান থেকে কিছু আয় তারা সিডিএ তথা বাংলাদেশ সরকারকে দেবে। এ প্রস্তাবের ব্যাপারে সরকার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, ২০২১ সালে চীনের প্রতিষ্ঠান সিআরসিসিকে চট্টগ্রাম মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি পরীক্ষা করতে দেয়ার কথা হয়। এ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)-এর কাছে এই প্রজেক্ট সম্পূর্ণ নিজেদের খরচেই করার প্রস্তাব দেয় চীনা চার প্রতিষ্ঠান। চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাবে বলা হয়, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ইকোনমিক জোন থেকে বিমানবন্দর এবং শহরের গ্রোথ সেন্টারগুলোতে তারা মেট্রোরেলের রুট নির্ধারণ করবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমীক্ষাসহ সব খরচ তারা নিজেরা বহন করবে। এতে বাংলাদেশ সরকারকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। প্রস্তাব অনুযায়ী, ফ্রিতে মেট্রোরেল করে দেয়ার বিনিময়ে সিসিসি, সিআরসিসিসহ মোট ৪টি প্রতিষ্ঠান মিরসরাই ইকোনমিক জোন থেকে বে-টার্মিনাল পর্যন্ত সন্দ্বীপ চ্যানেলের কিছু অংশ ভরাট করে সিংগাপুর এবং দুবাইয়ের আদলে উপশহর গড়ে তুলবে। এটা সম্পূর্ণ তাদের খরচে করা হবে। আর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই উপশহর সম্পূর্ণ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকবে। তবে এই সময়টার পরিসর কতো সেটি প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়নি। প্রস্তাবে বলা হয়, দুবাই, জাপান, শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশে সাগরের কিছু অংশ ভরাট করে এমন প্রকল্প হয়েছে। এতে দেশগুলো আর্থিকভাবে খুব লাভবান হয়েছে। পরিবেশগত কোনো সমস্যাও হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম নগরীতে মেট্রোরেল বা মনোরেল প্রকল্পের জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করলেও অর্থায়নের অভাবে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। চীনের প্রতিষ্ঠান সিআরসিসি ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ‘কোইকা’ এই প্রকল্পে তাদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছে।

চীনের চারটি প্রতিষ্ঠানের দেয়া প্রস্তাবে বাংলাদেশ কতোটুকু লাভবান হবে জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, ‘এর মাধ্যমে এই এলাকায় অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন একটি দুয়ার তৈরি হবে। হাজার হাজার মানুষের স্থায়ী কর্মসংস্থান হবে। আর এটি সাগর পাড়ের পরিত্যক্ত জমি ব্যবহার করেই করা হবে। পৃথিবীর বেশকিছু দেশ এরকম প্রজেক্টের মাধ্যমে লাভবান হয়েছে। আর চীন যেহেতু পৃথিবীর অর্থনৈতিক পরাশক্তি- এর মধ্যদিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ হবে। তারা আরও বিভিন্ন প্রজেক্টে এগিয়ে আসবে। আর চীনা এইসব প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, মিরসরাইয়ে এই প্রকল্প হলে ওই অংশে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনের মতো একেবারে স্বচ্ছ পানি পাওয়া যাবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষক ড. কামাল উদ্দিন  বলেন, ‘চীনের চারটি কোম্পানি ফ্রিতে করে দিবে বললো এটি একদিকে পজেটিভ ধরা যায়। তবে ফ্রি’র সবকিছুতে কিছু কিন্তু থাকবে। তারা এত বড় মেগা প্রজেক্ট করবে, এটা অবশ্যই সম্পূর্ণ তাদের স্বার্থে করবে। নিরাপত্তার প্রশ্নটিও জড়িত রয়েছে এর সঙ্গে।’মানবজমিন

পাঠকের মতামত: