ঢাকা,রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় ধান সংগ্রহ অভিযান নিয়ে চক্রান্ত মিল মালিকের কাছ থেকে চাল কেনার পাঁয়তারা

জহিরুল ইসলাম : Pic, Chakaria 17.06.2016-
চকরিয়ায় সরকারী ভাবে ধান সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা যোগসাজস করে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ করে চালের মিল মালিকের কাছ থেকে চাল কেনার জন্য পাঁয়তারা চালাচ্ছে। চকরিয়ার চিরিংগা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নানা অজুহাতে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করায় গুদাম থেকে ফেরত যাচ্ছে বহু কৃষক। এতে একদিকে কৃষকরা তাদের ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত ও হয়রানি হচ্ছে, অন্যদিকে ধান সংগ্রহে ভর্তুকি দিয়ে সরকারের বরাদ্দ দেয়া লাখ লাখ টাকা মিল মালিক, ফঁড়িয়া, কমিটির লোকজনের পকেটে চলে যাচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, এ বছর বোরো মৌসুমে ২ হাজার ৭৬১মে.টন ধান ক্রয়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার প্রতি কেজি ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে ২৩টাকা। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের জন্য সরকারী নির্দেশনা রয়েছে। গত ৫ মে থেকে এই পরিমান ধান সংগ্রহ করা শুরু করা হয়। ৫ জুনের মধ্যে এ পরিমান ধান সংগ্রহ কথা ছিল।  গত ১৫ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চকরিয়ার চিরিংগা খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখা যায়; প্রধান ফটকের দুইটি দরজাই বন্ধ। এ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান; উপজেলা কৃষি অফিস চকরিয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন থেকে ১ হাজার ৬১ জনের একটি তালিকা দিয়েছেন। ওই তালিকার কৃষকের মধ্যে এদিন (১৫ জুন) পর্যন্ত ১৩ জন কৃষকের কাছ থেকে মাত্র ৩১ মে, টন ৮০ কেজি ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনিই জানান; গত কয়েকদিনে প্রায় ১৫০জন কৃষককে ফেরত দেয়া হয়েছে। তাদের ধানে আদ্রতা বেশী ছিল। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা শশিধর চাকমা জানান, এই সংগ্রহ অভিযান পুরো আগষ্ট মাস পর্যন্ত চালানো যাবে। ওই সময়ের মধ্যেও যদি ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হয় তাহলে চাল ক্রয়ের দিকে যেতে হবে। তাও সরকারী নির্দেশনা আসলে। ধান সংগ্রহ অভিযানে গঠিত উপজেলা কমিটিতে চকরিয়া সোনালী অটো রাইচ মিলের মালিক ফজল করিমও সদস্য রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে তার যোগসাজসেই কমিটির সংশ্লিষ্টরা ধান ক্রয় অভিযান ব্যর্থ করে দেয়ার পায়তারা করছে। গত বছরও এভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ করে দিয়ে অবশেষে সোনালী অটো রাইচ মিলের মালিক ফজল করিমের কাছ থেকে চাল ক্রয়ে বাধ্য করা হয়েছিল। ওই বছর তারা পরস্পর যোগসাজস করে এ ভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
অভিযোগ উঠেছে এ বছরও ধান সংগ্রহ অভিযানে গঠিত উপজেলা কমিটির কিছু সদস্য ও সরকারী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যোগসাজসে চালের মিল মালিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের একজন কৃষক জানান; তিনি সহ ওই এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক চকরিয়া খাদ্য গুদামে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সরকারী বিনির্দেশ অনুযায়ী তাদের উৎপাদিত ধান নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার ধানে আদ্রতা, চিড়া বেশীর কথা বলে তাদের ধান ক্রয় না করে ফেরত দিয়েছেন। তারা বলেন, আরও নানা খুঁত দেখিয়ে ধান ক্রয় না করায় আমাদের উপর ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’র মতো অবস্থা হয়েছে। এখন অনেক টাকা বহন খরচ গুনতে হচ্ছে। এলাকাবাসি জানায়; এলাকায় এক আঁড়ি( ১০ কেজি) ধানের দাম ১৩০(একশত ত্রিশ) টাকা মাত্র। সরকারী গুদামে ধান বিক্রি করতে পারলে আঁড়ি প্রতি পাওয়া যাবে ২৩০(দুইশত সাত) টাকা। কৃষকরা জানান; যে রাইচ মিলের মালিক ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ করে দিয়ে চাল ক্রয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, তিনি বোরো মৌসুমের সময় আঁড়ি( ১০কিজি) প্রতি ১১০ থেকে ১২০ দরে ধান কিনে গুদাম জাত করে রেখেছেন। সেই ধানের চাল বিক্রি করবেন সরকারী দরে অর্থাৎ ৩২ টাকা করে। লাভ কৃষকের ঘরে আসবে, যাবে মিল মালিকের পকেটে। এতে সংশ্লিষ্টরা লাভবান হবেন।
চকরিয়া উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহিরুল হক অনিয়ম দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে বলেন, ধান ক্রয় করতে না পারলে সরকার সিদ্ধান্ত দিবে চাল ক্রয় করবো কী না।
চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত আসলে আমরা সেদিকে এগুবো। তিনি বলেন চালের মিল মালিক লাভবান হলেই সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে। উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি নয়, সরকারী বিনির্দেশ অনুযায়ী না হলে আমরা ধান নিতে পারিনা।
কৃষকরা বলেন; এ ভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়ে গেলে ক্ষতি হবে আমাদের। অন্যদিকে লাভবান হবেন মিল মালিক ও উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সদস্য ও চকরিয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আতিক উল্লাহ বলেছেন; যথা সময়ে আমি কৃষকদের তালিকা দিয়ে দিয়েছি। এখনতো বর্ষা এসে গেছে। ধানে আদ্রতা আরো বেড়ে যাবে। তাহলে কি হবে ? কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করা না হলে কৃষকরা ধান উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবে।

পাঠকের মতামত: