ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

পলাতক একজনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

চকরিয়ায় দুদকের অভিযানে গ্রেপ্তার সাব রেজিস্ট্রারসহ দুইজন কারাগারে

চকরিয়ায় দুদকের অভিযানে গ্রেফতার উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মো: নাহিদুজ্জামান ও মোহরার দুর্জয় কান্তি পাল

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টানা ৮ ঘন্টার অভিযানে গ্রেফতার হওয়া সাব-রেজিস্ট্রার মো: নাহিদুজ্জামান ও মোহরার দুর্জয় কান্তি পালকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার বিকালে চকরিয়া থানা পুলিশ দুইজনকে উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সৌর্পদ্দ করেন। এদিন সরকারি বন্ধ থাকায় তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট শহীদুল্লাহ চৌধুরী।

আগের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে চকরিয়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম। এদিন দুদকের টানা ৮ ঘন্টা অভিযানে সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে নগদ ৬ লাখ ৪২ হাজার ১’ শ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান চলাকালে শ্যামল বড়ুয়া নামের একজন অফিস সহকারী বাউন্ডারি টপকে পালিয়ে যায় ।

অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো: নাহিদুজ্জামান ও মোহরার দুর্জয় কান্তি পালকে। গ্রেপ্তারকৃত ও পলাতক তিনজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়েছে। এই তিনজনের নিয়ন্ত্রণ থেকে ঘুষের টাকাগুলো পাওয়া গেছে বলে মামলার এজাহারে দাবী করা হয়।

গ্রেফতার হওয়া সাব-রেজিস্ট্রার নাহিদুজ্জামান নাটোর জেলার গুরুদাশপুর থানার উত্তর নাড়ি বাড়ির বাসিন্দা মোজাম্মেল হকের ছেলে এবং সাব রেজিস্ট্রার অফিসের মোহরার দুর্জয় কান্তি পাল কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুস্কুল এলাকার মধূরাম কান্তি পালের ছেলে ও পলাতক অফিস সহকারী শ্যামল বড়ুয়া কক্সবাজার পৌরসভার মোজাহেরপাড়ার বাসিন্দা দ্বীনবন্ধু বড়ুয়ার ছেলে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়। একপর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার মোঃ তানভীর হোসেনকে সাথে নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের বাসাতেও তল্লাশী চালানো হয়। দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন অভিযানের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুদকের অভিযান সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে বেশ কিছুদিন ধরে জমির দলিল সম্পাদনের সময় ঘুষের লেনদেন নিয়ে বেশকিছু অভিযোগ আসে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয় অভিযানে নামে। সম্প্রতি চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের রশিদ আহমদ নামের এক ব্যক্তির দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য সাব-রেজিস্ট্রারের নাম ব্যবহার করে এক কর্মচারী ঘুষ দাবি করেন।

দুদক কর্মকর্তারা ভুক্তভোগী অভিযোগকারী সেবাগ্র্রহীতাকে সাথে নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে যান। পরে দুদক কর্মকর্তারা কার্যালয়টিতে অভিযান চালান। এ সময় সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের প্রধান সহকারী ও অন্যান্য সহকারীর কাছ থেকে দুদকের টিম তিনটি স্থান থেকে ৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে।

অভিযানে নেতৃত্বে দেয়া দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চকরিয়া সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে অভিযান চালিয়ে ৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। তদমধ্যে সাব রেজিস্ট্রার মো. নাহিদুজ্জামানের ব্যবহৃত রেকর্ড রুমের স্টিলের লকারের প্রথম ড্রয়ার থেকে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৫০ টাকা, অফিস সহকারি শ্যামল বড়ুয়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫০ টাকা এবং অফিস মোহরার দুর্জয় কান্তি পালের ড্রয়ার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, জব্দ করা টাকাগুলোর বিষয়ে তারা দুদককে সন্তোষজনক কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। টাকাগুলো তারা দলিল রেজিস্ট্রিকালে ঘুষ হিসেবে গ্রহন করেছেন। তাদের ড্রয়ার থেকে ঘুষ লেনদের হাতের লেখা ৪১টি স্লিপ জব্দ করা হয়েছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক বলেন, ঘুষ লেনদেন জড়িত থাকার অভিযোগে সাব-রেজিস্ট্রারসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ও পলাতকসহ মোট তিনজনকে অভিযুক্ত করে শুক্রবার (২ এপ্রিল) দুপুরে চকরিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। বিকাল চারটার দিকে গ্রেফতারকৃত সাব রেজিস্ট্রার ও মোহরারকে উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মুহাম্মদ যোবায়ের।

এদিকে বলাবলি হচ্ছে দুদকের অভিযান শুরু হওয়ার পর কৌশলে পালিয়ে যাওয়া শ্যামল বিপুল টাকা ও বেশ কিছু কাগজপত্র সাথে নিয়ে গেছেন।

 

পাঠকের মতামত: