কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগে উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে চার চিকিৎসক, দুই পরিচালকসহ ৮জনের বিরুদ্ধে একটি নালিশী মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (৩০ মে) আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন মারা যাওয়া রোগী আকতার আহমদের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (৫০)। মামলাটিতে বিবাদি করা হয়েছে উপজেলার বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্টান জমজম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কবির, পরিচালক রিয়াজ মো.রফিক ছিদ্দিকী, হাসপাতালের চিকিৎসক মো.গোলাম ফারুক, গাইনী ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ মো.ফয়েজুর রহমান, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মো.আতাউর রহমান, মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ মো.কবির আহমদ এবং হাসপাতালের সুপার ভাইজার মো.শাহজাহান ও আমিরুল ইসলাম।
জানতে চাইলে বাদি পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট লুৎফুল কবির বলেন, আদালত বাদির অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত পুর্বক অভিযুক্ত বিবাদিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আর্জিতে বাদি আয়েশা খাতুন বলেন, তার স্বামী আকতার আহমদ ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে গত ২৬ মে রাতে চকরিয়া শহরের জমজম হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওইসময় স্বজনরা চিকিৎসকের কাছে জানতে চান তার (আকতার আহমদ) শাররীক অবস্থা জটিল কিনা। অসুবিধা হলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কিংবা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠাতে হবে কিনা। ওইসময় হাসপাতালের কর্তব্যরত কর্তৃপক্ষ বলেন কোন সমস্যা নেই। তার চিকিৎসা এখানে (জমজম হাসপাতালে) হবে। বাদি অভিযোগ করেন, হাসপাতালে ভর্তি করার পর অভিযুক্ত ৩নম্বর বিবাদি শুধু মাত্র একবার তার স্বামীকে দেখেন এবং চিকিৎসাপত্র দেন। তবে তাকে হাসপাতালে শুইয়ে রাখা হয় ওষুধ হিসেবে শুধু স্যালাইন দিয়ে। পরদিন (২৭ মে) সকালে বাদি ও স্বজনরা রোগীর শাররীক অবস্থা অবনতি দেখে হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চান তাকে অন্যত্র নিতে হবে কিনা। ওইসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক (৩নম্বর বিবাদি) সহ অন্য অভিযুক্তরা বলেন, তার চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কোন সমসা নেই। তোমার স্বামী এখানে ভাল হয়ে যাবে।
বাদি আয়েশা খাতুন মামলার আর্জিতে বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের এমন আশ্বাসে তার স্বামীকে জমজম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রেখে দেন। এ অবস্থায় ২৭ মে দুপুর ১২টার দিকে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের চিকিৎসা অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারনে তার স্বামী আকতার আহমদ মারা যায় বলে মামলার এজাহারে তিনি দাবি করেন। মারা যাওয়ার পর দুপুর আড়াইটার দিকে বাদি ও তার স্বজনরা হাসপাতালে অভিযুক্ত বিবাদিদের সাথে কথা বলে জানতে চান ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগী আকতার আহমদ কিভাবে মারা গেছেন। ওইসময় বিবাদিরা আরো লোকজন নিয়ে বাদি এবং তার স্বজনদের উপর হামলা করে। জোর করে তাদেরকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। ঘটনার সময় বাদির পক্ষের লোকজনের কাছ থেকে নগদ ২০হাজার পাঁচশত টাকা ও দুটি মোবাইল সেট লুটে নেয় বলে এজাহারে উল্লেখ্য করেছেন।
নিহত আকতার আহমদের স্ত্রী আয়েশা খাতুন অভিযোগ করেছেন, চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারনে তার স্বামীর মৃত্যু হলেও ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে উল্টো হাসপাতালের পক্ষ থেকে তার স্বজনদেরকে আসামি করে থানায় একটি সাজানো মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় পুলিশ কয়েকদিন আগে রফিকুল ইসলামকে আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। বাদি অভিযোগ করেন, সাজানো মামলায় আসামি করা রফিকুল ইসলাম ইসলাম, তার ভাই ইদ্রিছ আহমদ, আবদুল আজিজ ও আলমগীর ঘটনার সাথে কোন মতে জড়িত নেই। তবে আমার আত্মীয় হিসেবে তাঁরা আমার স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় মুলত হাসপাতালের লোকজন তাদেরকে আসামি করে হয়রানী করছে। আমি এ ঘটনায় বিজ্ঞ আদালত ও প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করছি।
পাঠকের মতামত: