ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার হারবাংয়ে পাহাড়ি জনপদ কলাতলীর মাদক সম্রাট তোফাইলের কোটি টাকার বানিজ্যের আস্তানায় ভ্রাম্যমান আদালতের নিস্ফল অভিযান

এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া :::

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের পাহাড়ি জনপদ কলাতলী এলাকায় মাদক সম্রাট তোফায়েল আহমদ কয়েকবছরের ব্যবধানে বনবিভাগের বিপুল জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন আলীশান অট্টলিকা। নিজের সেই অট্টালিকার পাশেই দখল করা বনবিভাগের ওই জায়গা বিক্রি করা হচ্ছে প্লট আকারে। ইতোমধ্যে তিনি সব প্লট বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এখনো তার নেতৃত্বে প্রকাশ্যে চলছে বনবিভাগের জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা। বনবিভাগের লোকজন প্রথমে বাঁধা ও পরে আদালতে মামলা দায়ের করে কোন মতে দায় সারছেন। এতে সুযোগ বুঝে আরো বেপরোয়া হচ্ছে আলোচিত মাদক সম্রাট।

বনবিভাগের জায়গা দখল করে প্লট বিক্রির পাশাপশি তোফায়েল ও তার ভাই জুলফিকার কলাতলীর সেই অট্টালিকা বাড়ির আশপাশ এলাকায়র পাহাড়ের ভেতর গড়ে তুলেছেন মাদক বিক্রির আস্তানা। পাশের লামা উপজেলার আজিজনগর ও হারবাং ইউনিয়নের রাখাইন পল্লী থেকে প্রতিদিন সংগ্রহ করা হাজার হাজার লিটার বাংলা মদ আস্তানায় মজুদ করে আবার কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছেন মাদক সম্রাট তোফায়েল। এই মাদক ব্যবসা তার একদিনের নয়, চলছে কয়েকবছর ধরে। নিরাপদে ব্যবসা চালাতে তিনি ইতোমধ্যে পুলিশ ও প্রশাসনিক ঝামেলা এড়াঁতে হারবাং ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সরকারি দলের নেতা পরিচয়ে তিনি এখন দাপটের সাথে চালাচ্ছেন মাদক ব্যবসা। স্থানীয়দের দাবি, মাদক বিক্রি করে তোফায়েল এখন প্রতি মাসে আয় করছেন অন্তত কোটি টাকা। তবে আয়ের টাকার একটি বড় অংশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন এজেন্সির কাছে যায় বলে দাবি করেন স্থানীয় সুত্র।

জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও গণমাধ্যমের মারফতে মাদক সম্রাট তোফায়েল আহমদের এত গুন কীর্তন শুনে মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুরে তাকে গ্রেফতারে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের কলাতলী পাহাড়ি জনপদের ওই অট্টালিকায় অভিযান পরিচালনা করেন চকরিয়া উপজেলা ভ্রাম্যমান আদালত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তুষার আহমদের নেতৃত্বে আদালতের অংশ নেয় থানা পুলিশের বিপুল পরিমাণ সদস্য।

অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে আদালতের পেশকার ও উপজেলা ভুমি অফিসের প্রধান সহকারি তপন কান্তি দাশ বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান টের পেয়ে মাদক সমাট তোফায়েল ও তার ভাই জুলফিকার পালিয়ে যায়। ওই সময় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। অভিযানের সময় তার আস্তানায় পাওয়া যায়নি কোন ধরণের মাদক। এদিকে আদালতের সাথে অভিযানে অংশ নেয়া অন্য এক কর্মকর্তা দাবি করেন, অভিযানের বিষয়টি আগে-ভাগে জানতে পারে মাদক সম্রাট তোফায়েল। সেই কারনে তাকে তো গ্রেফতার করা যায়নি, তার আস্তানা থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি মাদক। ওই কর্মকর্তার ধারনা, পুলিশের কতিপয় র্সোস অভিযানের খবরটি অনেক আগেই তোফায়েলকে জানিয়ে দিয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানায়, হারবাংয়ের কলাতলী ও আজিজনগর এলাকায় এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে গাঁজা, ফেন্সিডিল হেরোইনসহ বাংলা মদ। ফলে যুব সমাজ ধাবিত হচ্ছে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে। মাদক সেবন করতে গিয়ে সমাজের অনেক কিশোর, যুবক বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। হারবাংয়ের কলাতলী ও আজিজনগর মগপাড়া বাংলা মদের ডিপো থেকে কুখ্যাত মাদক সম্রাট তোফাইল আহমদ সড়ক পথে লোহাগাড়া, সাতকানিয়, চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, কর্ণফুলীসহ চট্টগ্রাম মহানগরেরর বিভিন্ন আঁখড়ায় পাচার করছে বলে স্থানীয় সুত্রে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। মাদক সমাট তোফাইল হারবাং ইউনিয়নের পাহাড়ি জনপদ কলাতলী এলাকার আহমদ কবিরের ছেলে। তার রয়েছে চারটি স্ত্রী।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার হারবাংয়ের কলাতলী ও আজিজনগর মগপাড়া এলাকায় পাইকারী এবং খুচরা দামে বেঁচা-বিক্রির বাজার বসে প্রতিদিন। ইতোপুর্বে সেখান থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তোফাইল ও তার ভাই জুলফিকার কয়েকবার ধরা পড়লে কারাভোগের পর ফের জামিনে এসে মাদক বিক্রি করছে অবাধে। বর্তমানে তোফাইল প্রতিমাসে কোটি টাকার মাদক বানিজ্য করছেন বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, তোফাইল মাদক ও বন আইনের মামলাসহ অন্তত ডজন খানেক মামলার পালতক আসামী। তার নেতৃত্বে আজিজনগর ও হারবাং এলাকায় মাদকের ব্যবসা জমজমাট হওয়াতে এলাকায় অপরাধ প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু পুলিশের নজর এড়িয়ে তিনি দিব্যি এলাকায় রয়েছেন বহাল তবিয়তে। চালাচ্ছেন বনবিভাগের জায়গা দখলের পাশাপাশি মাদক বিক্রির মহোৎসব।

পাঠকের মতামত: