ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভালোবাসা দিবস আজ

চকরিয়ার বরইতলীর শতাধিক গোলাপ বাগানে ফুল বিক্রির উৎসব 

ঋতুরাজ বসন্ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতিকে। প্রকৃতির পরতে পরতে ফুটেছে ফুল। বসন্তের আগেই
ফাগুনের হাওয়া মাতোয়ারা সবাই। এরইমধ্যে বছরঘুরে সামনে এসেছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইনস ডে)। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। সাতদিন পর ২১ ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস। আর এই দুইটি দিবস ঘিরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের শতাধিক বাগানে বেড়েছে ফুল বিক্রির ধুম। দুইটি দিবসে এবার চাষিরা কমপক্ষে ৫০ লাখ  টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে একাধিক বাগান ঘুরে দেখা গেছে, ভালোবাসা দিবস ঘিরে প্রায় প্রতিটি বাগান থেকে গোলাপ ফুল বিক্রির ধুম পড়েছে। কেউ বাগান থেকে ফুল তুলছেন, আবার কেউ প্যাকেট করছেন। আবার কেউ কেউ ফুল ভর্তি প্যাকেট তুলে দিচ্ছেন চট্টগ্রাম অভিমুখী একাধিক বাস গাড়িতে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ পুরোপুরি স্বাভাবিক থাকায় বেশ খুশি মনে ফুল চাষে নামেন চাষিরা। এতে চলতি বছর পুরোদমে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে গোলাপ নগর বরইতলী ইউনিয়নে।
জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের শতাধিক বাগান থেকে পাইকারি মূল্যে কিনে চট্টগ্রাম শহরের চেরাগি পাহাড় এলাকায় ফুল বিক্রি করেন আড়তদার ব্যবসায়ীরা। শতাধিক বাগান থেকে তারা প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ হাজার গোলাপ ফুল কেনেন । বিশেষ দিবসে তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে কেনেন তারা। এবারের ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ৮০ হাজার গোলাপ ও ২০ হাজার গাডিওলাস ফুলের আগাম অর্ডার দেওয়া হয়েছে।
বরইতলীর ফুল চাষি জাহেদুল ইসলাম  বলেন, আমি একসময় তামাকের চাষ করতাম। বিভিন্ন কারণে আমি তামাক চাষ ছেড়ে গত কয়েক বছর ধরে মনোযোগী হই ফুল চাষে। এবারও দুই কানি জমিতে গোলাপ ও গাডিওলাস ফুলচাষ করেছি। ফলনও ভালো হওয়ায় বেশ খুশি লাগছে।
বাগানের শ্রমিক বরইতলী মাইজপাড়ার বাসিন্দা  খালেদা বেগম  বলেন, ফুল বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে প্রতিদিন টাকা ইনকাম করছি। এতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালভাবে অভাব-অনটন ছাড়াই সুখে আছি। বলতে গেলে এখন আমার অভাব নেই
বরইতলী ফুলবাগান মালিক সমিতির সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ ফুল চাষের অনুকূলে থাকায় পুরোদমে ফুলচাষে নেমেছেন চাষিরা। তাই আশা করছি, এবারের ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবসে গোলাপ, গাডিওলাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল বিক্রি হবে ৫০ লাখ টাকার কাছাকাছি।
চাষিরা জানান, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে গোলাপের প্রচুর চাহিদা দেখা দেয়। ওই সময় প্রতিটি গোলাপ ৮ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে,  বরইতলী ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ হাজার  গোলাপ বিক্রির উদ্দেশ্যে কাটা হয়। এর ৯০ শতাংশ সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় এলাকার ফুলের দোকানগুলোয়। অবশিষ্ট গোলাপ চকরিয়া ও কক্সবাজারের বিভিন্ন দোকান সরবরাহ করা হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন বলেন, বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নে চলতি বছর ৬৬ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ২৮ হেক্টরে গাডিওলাস ও আরও ১৬ হেক্টরসহ মোট ১১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করছেন পাঁচ শতাধিক চাষি। এবারের ভালোবাসা দিবসসহ সবকটি দিবসে ফুল বিক্রিও ভালো হবে। এতে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন চাষিরা।

পাঠকের মতামত: