ডেস্ক রিপোর্ট :: গোয়েন্দা নজরদারিতে ১৭ প্রার্থীএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া ১৭ প্রার্থীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ধানের শীষের প্রার্থী ১৫ জন। বাকি দু’জন জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী।
যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গি কানেকশনের অভিযোগে তাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হয়েছে। এ তালিকায় আছেন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের ৮, জঙ্গি কানেকশনে বিএনপির ৬ এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নাম রয়েছে আরও ৩ জনের।
উচ্চপর্যায়ের একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে সরকারের শীর্ষ পর্যায় ও নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সূত্র বলছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ধানের শীষ মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আবদুল হাকিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের শক্ত অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এলাকায় আলবদর বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেন। সে সময়ে তিনি পাকিস্তানপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে।
গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের ধানের শীষ প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলাম। তিনিও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আলবদর বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ধানের শীষ প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত নেতা আ ন ম শামসুল আলম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আলবদর বাহিনীর সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ছাত্রসংঘের সাবেক নেতা ও জামায়াতের অর্থদাতা শামসুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এছাড়া খুলনা-৫ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার। তার নাম রয়েছে একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকারদের তালিকায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহায়তায় তিনি খুলনা অঞ্চলের মুক্তিকামী বাঙালি ও তাদের ধনসম্পদের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন।
২০০১ সালের নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে ৪ দলীয় জোটের ব্যানারে তিনি এমপি হয়েছিলেন। এমপি হওয়ার পর পুনরায় তার যুদ্ধাপরাধী ভয়ংকর চেহারা দেখা যায়। সে সময় তিনি রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস বাহিনীর আদলে খুলনা অঞ্চলে ‘জিহাদি পার্টি’ নামে কুখ্যাত এক বাহিনী গড়ে তোলেন। ভয়ংকর এ বাহিনীর মাধ্যমে তিনি এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর একাত্তরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তেন।
এমনকি তার জিহাদি বাহিনীর মাধ্যমে হাজার হাজার বাড়িঘর লুট, নারী ধর্ষণ, জমি দখল ও জোরপূর্বক লাখ লাখ টাকা আদায় করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ পুরো অঞ্চলের মানুষের কাছে রীতিমতো দানবে পরিণত হয়েছেন গোলাম পরওয়ার। শীর্ষ ৫০ যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীর তালিকায় তার নাম রয়েছে।
গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন বগুড়া-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মাসুদা মোমিন তালুকদার। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবদুল মোমিন তালুকদারের স্ত্রী। আবদুল মোমিন তালুকদার মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকায় রাজাকার কমান্ডার ছিলেন।
পিরোজপুর-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শামীম বিন সাঈদী। তিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র।
এছাড়া কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদও আছেন কঠোর গোয়েন্দা নজরদারিতে। অবশ্য তিনি ধানের শীষের প্রার্থী নন। তিনি এবার আপেল মার্কায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
পাবনা-১ (সাঁথিয়া উপজেলা ও বেড়া উপজেলার আংশিক) আসনে প্রার্থী হয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান। তিনিও নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
অপরদিকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী এবার নির্বাচনের অংশ নেয়া ধানের শীষ প্রতীকের যেসব নেতার বিরুদ্ধে জঙ্গি মদদের অভিযোগ রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- নওগাঁ-৬ আসনের প্রার্থী আলমগীর কবির। তিনি উত্তরবঙ্গে জঙ্গিবাদ বিস্তারে প্রত্যক্ষ মদদ দেন বলে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
আছেন রাজশাহী-৫ আসনের প্রার্থী নাদিম মোস্তফা। রাজশাহীতে জঙ্গিবাদের বিস্তারের নেপথ্যে তার ভূমিকা রয়েছে এমন অভিযোগ বেশ পুরনো। নাটোর-২ আসনে ধানের শীষ প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস দুলুর বিরুদ্ধেও উত্তরবঙ্গে জঙ্গিবাদ বিস্তারে মদদ দেয়ার শক্ত অভিযোগের কথা বলছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
এছাড়া একই অভিযোগ রয়েছে রাজশাহী-১ আসনে ব্যারিস্টার আমিনুল হক, মিজানুর রহমান মিনু (রাজশাহী-২) এবং সুলতান সালাউদ্দীন টুকুর (টাঙ্গাইল-২) বিরুদ্ধে।
ধানের শীষের বেশ কয়েক প্রার্থীকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম-৪ আসনের প্রার্থী ইসহাক চৌধুরী। তিনি ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করা বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বড় ভাই।
এছাড়া ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামানের নামও রয়েছে। যিনি নেত্রকোনা-৪ থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন।
তালিকায় আছেন রংপুর-৩ আসনের ধানের শীষ প্রার্থী রিটা রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডে জড়িত মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানের স্ত্রী।
পাঠকের মতামত: