ডেস্ক নিউজ:
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার দুই সহযোগী শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনের ফাঁসি কার্যকরে প্রস্তুত রয়েছে কারাগার। রাষ্ট্রপতির কাছে করা প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর এখন কারা কর্তৃপক্ষ তাদের ফাঁসি কার্যকরের পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যক্রমগ্রহণ করছেন। কারাবিধি অনুযায়ী পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও কারা কর্মকর্তারা।
কারা অধিদফতরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, মুফতি আবদুল হান্নানসহ তিন জঙ্গির প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তবে রাষ্ট্রপতির নাকচ করা কাগজপত্র এখনও তারা হাতে পাননি। হাতে পেলে কারা বিধি অনুযায়ী তারা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
গত ২২ মার্চ মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রিভিউ আবেদন খারিজের বিষয়টি ওইদিনই তাদের জানিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। কারাবিধি অনুযায়ী ওইদিন থেকেই তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষণ-গননা শুরু হয়েছে। এরপর তাদের শেষ সুযোগ থাকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করার। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদনের পর তিনি যতদিন বিষয়টির নিষ্পত্তি না করবেন, ততদিন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা যাবে না। তবে রাষ্ট্রপতি যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেন, তাহলে রিভিউ আবেদন খারিজের দিন থেকে ২১দিন পর ও ২৮ দিনের আগে যেকোনও সময় সংশ্লিষ্টদের ফাঁসি কার্যকর করার বিধান রয়েছে।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেল সুপার মিজানুর রহমান রবিবার বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র হাতের পাওয়ার পর কারাবিধি অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে এখন পর্যন্ত তাদের হাতে এ সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র পৌঁছেনি বলেও তিনি জানান।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সগির মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবরে জানতে পেরেছি মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির প্রাণ ভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি নাকচ করে দিয়েছেন। তবে এ সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র তারা এখনও হাতে পাইনি।’ তার কারাগারে বন্দি রয়েছেন জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন। কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর কারাবিধি অনুযায়ী এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন বলেও তিনি জানান।
তিন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা যেহেতু প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন এবং রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দিয়েছেন, তাই কারা কর্তৃপক্ষ এখন যেকোনও দিন এ রায় কার্যকর করতে পারবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন রাষ্ট্রপতি খারিজ করে দিয়েছেন। কারা-কর্তৃপক্ষ এখন তাদের ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফাঁসি কার্যকরের জন্য কারাবিধি অনুযায়ী যা যা করা দরকার, সে প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।’
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে গ্রেনেড হামলায় আনোয়ার চৌধুরীসহ আরও অনেকে আহত হন। নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন। পরে পুলিশ বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশের (হুজি-বি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সম্পূরক চার্জশিটে আরেক জঙ্গি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ও মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এরপর উচ্চ আদালতে তারা আপিল করলে গত ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট নিম্ন-আদালতের রায় বহাল রাখেন। এরপর তারা রিভিউ আবেদন করলে সেটাও গত ২২ মার্চ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
পাঠকের মতামত: