রাজধানীর কাফরুল এলাকায় সোমবার রাতে একটি ক্লাবে অভিযান চালানোকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনারসহ (এসি) ১১ সদস্যকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁদেরকে হেফাজতে নেওয়া নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। তবে এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্লাবের লোকজন তাদের কাছে অভিযোগ করেছে—অভিযানের নামে ১১ পুলিশ সদস্য ক্লাবের লোকজনকে মারধর করে মোবাইল ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছে। তবে ক্লাবের নাম প্রকাশ করেনি র্যাবের ওই সূত্র।
অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই পুলিশ সদস্যরা মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে ওই ক্লাবে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ইয়াবাসহ চারজনকে আটক করেছিলেন। তারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হেফাজতে নেওয়া ১১ পুলিশ সদস্যের মধ্যে একজন ডিবির এসি, একজন ইন্সপেক্টর, দুজন সাব-ইন্সপেক্টর এবং অন্যরা কনস্টেবল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার রাতে ডিবির একটি দল কাফরুলের ইব্রাহিমপুরের একটি ক্লাবে মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। ওই অভিযানে ক্লাব থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক উদ্ধার করা হয়। ওই সময় চারজনকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে একজন ছিলেন এক নারী মেজরের স্বামী। পরে কাফরুল এলাকায় সেনানিবাসের গেট সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আটক হওয়া চারজন গাড়ির ভেতর থেকে চিত্কার করে ওঠে। চিত্কার শুনে এমপি (মিলিটারি পুলিশ) চেকপোস্টে কর্মরত সদস্যরা গাড়িটি আটকে দেন। এ সময় মেজরের স্বামী বলতে থাকেন, তাঁরা (পুলিশ) ক্লাবে ঢুকে মারধর করে টাকা-পয়সা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়েছেন। পরে ১১ জন পুলিশ সদস্যকে থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ’
পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, ‘এ ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে একজন অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ তবে ওই ১১ পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, তদন্তকালীন তাঁরা হেফাজতে থাকবেন।
তবে র্যাবের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সোমবার রাতে কাফরুলের ইব্রাহিমপুর এলাকার একটি ক্লাবে এলাকার যুবকরা ক্যারমবোর্ড খেলছিলেন। এমন সময় ডিবির এসির নেতৃত্বে সেখানে যান ১১ জন। সবাই ছিলেন সাদা পোশাকে। তাঁরা গিয়ে ‘এখানে জুয়াখেলা হচ্ছে’ বলে যুবকদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা যা ছিল সবই নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। একপর্যায়ে তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলে কেউ জানান, র্যাবের মেজর, কেউ বলেন সেনাবাহিনীর সদস্য। পরে তাঁরা চলে গেলে এলাকাবাসী দ্রুত র্যাব-৪-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে। র্যাব-৪ থেকে জানানো হয়, সেখানে র্যাবের কেউ অভিযানে যায়নি। যে নাম বলেছে সে নামের কোনো মেজরও র্যাব-৪-এ নেই। একই সময় ভুক্তভোগীরা বিষয়টি জানায় সেনানিবাসেও। পরে সেনানিবাস এলাকা দিয়ে গাড়িটি যাওয়ার সময় মিলিটারি পুলিশ আটকে দেয়। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে তাঁদের আটক করে কাফরুল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। কালের কণ্ঠ
পাঠকের মতামত: