ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে রেল লাইন বাস্তবায়নে বনাঞ্চলের ক্ষতি না হয় সেই জন্য পরিকল্পনা দরকার -চকরিয়া সহ-ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলে বক্তারা

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বনজ সম্পদ রক্ষায় সম্পৃক্ত সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বক্তারা বলেছেন, সরকারি বনাঞ্চল উজাড় বন্ধে বন বিভাগকে প্রশাসনিক ভাবে দ্রুত সহায়তা দিতে হবে। তা না হলে বনাঞ্চলের মুল্যবান বৃক্ষরাজি ও বনভুমি বনবিভাগের পক্ষে একা রক্ষা করা সম্ভব নয়। এই জন্য প্রয়োজনে নীতিমাল পরিবর্তন করা জরুরী। বক্তারা বলেন, কক্সবাজার অঞ্চলের ঘুমধুম পর্যন্ত সরকারের নেয়া রেল লাইন বাস্তবায়নের উদ্যোগটি এতদাঞ্চলের জনগনের জন্য একটি আর্শীবাদ। রেল লাইনটি বাস্তবায়ন হলে জনগনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দ্বার উম্মোচর হবে। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারি বনাঞ্চলের মুল্যবান বৃক্ষরাজি যাতে কম কাটতে হয় সেই ব্যাপারে আগে থেকে পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। তবে রেল লাইনটি বনাঞ্চলের ভেতর না হয়ে একটু পশ্চিম পাশে হলেই ভাল হয়।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের অধীন চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী মেদাকচ্ছপিয়া ও ফাঁসিয়াখালী সহ-ব্যবস্থাপনা পরিষদের কাউন্সিল সভায় বক্তারা এ অভিমত প্রকাশ করেন। গত ৬জুন চকরিয়া উপজেলা মিলনায়তনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় মন্ত্রনালয়ের অধীন ক্রেল প্রকল্পের সহায়তায় উপজেলা সাইট অফিসার মো. আব্দুল কাইয়ুম এর সঞ্চালনার সভায় সভাপত্বি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের উপ-বনসংরক্ষক কেরামত আলী মল্লীক। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ হোসেন, ক্রেল প্রকল্পের কমিউনিকেশন অফিসার বিশ্বজিৎ সেন, গভার্নেন্স অফিসার সরোয়ার জাহান।
অনুষ্টানে প্রধান অতিথি কেরামত আলী মল্লিক সকলকে সুন্দর একটি কাউন্সিল সভা করার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বিশাল আয়তনের বনজ সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগের একার পক্ষে বন রক্ষা করা সম্ভব নয়, তাই সকলকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন আমাদের সাথে আছে, তাই প্রতিটি সভায় সকল বিভাগের প্রতিনিধি থাকা অতিব জরুরী। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও বনভূমি জবর দখলের প্রক্রিয়া রুখতে হবে এবং আজ সবাই মিলে সহ-ব্যব¯’াপনার ভিত্তিতে বণ্যপ্রাণীর আবাসস্থল রক্ষা ও জাতীয় উদ্যানের উন্নয়ন করতে হবে । পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে রেখে যেতে হবে একটি সবুজ-শ্যামল-সুন্দর পৃথিবী। তিনি বনজ সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগকে সহযোগীতা করার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেদাকচ্ছিয়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এসএম আবুল হোসেন, তিনি সহ-ব্যব¯’াপনা কাউন্সিলের সিপিজি এর সদস্য আলী আহমদ, আজগর আলী, দুলালসহ যারা কর্তব্যরত অবস্থায় বজ্রপাতে নিহত হন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি জানান ইতোমধ্যে বনাঞ্চলের আশপাশ এলকার ৪৩টি গ্রামের প্রায় ৫০,০০০ মানুষ বনাঞ্চলের উপর পরোক্ষ ও পত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। তাই স্বল্প জনবল নিয়ে বন বিভাগের একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ক্রেল প্রকল্প এই সহ-ব্যব¯’াপনাকে শক্তিশালী করে টেকশই সংগঠনে রূপ দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
ফাঁসিয়াখালী সিএমসির সদস্য সচিব ও রেঞ্জ কর্মকর্তা এবিএম জসিম উদ্দিন এবং ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা ও মেদাকচ্ছপিয়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব কাজী মোকাম্মেল কবির সভায় বিগত আটমাসে বনাঞ্চল রক্ষায় কাউন্সিল কর্তৃক সম্পাদিত কর্মকান্ডের প্রতিবেদন তুলে করেন।
অনুষ্টানে আরো বক্তব্য রাখেন পিএফ সভাপতি মোক্তার আহমেদ চেীধুরী, সিএমসি সদস্য আক্তার কামাল ও এলমুন্নাহার মুন্নি, সিএমসির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি বাহাদুল হক প্রমুখ।
অনুষ্টানের সভাপতি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব বর্তমান বিশ্বের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিশাল হুমকি। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বিপন্ন বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রায় সকল দুর্যোগ এদেশে বিদ্যমান। দেশের সীমিত বনজসম্পদ, জলাভূমি, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর ও জলবায়ুজনিত নেতিবাচক প্রভাবের কারনে এ সকল সম্পদের প্রাচুর্যতা এবং উৎপাদনশীলতা বাধাগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা বিপন্ন থেকে বিপন্নতর হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, সরকার বনাঞ্চল সংরক্ষণে সর্বদা সজাগ, সেখানে এখন দখল প্রক্রিয়া মাধ্যমে লোকালয় তৈরি করা হচ্ছে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে বনজ সম্পদ রক্ষায় তিনি বন বিভাগকে কঠোর ভুমিকা পালনের আহবান জানান। #

পাঠকের মতামত: