ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ওষুধ প্রশাসনের ব্যর্থতায় রোগীদের এতো ভোগান্তি : হাইকোর্ট

ঢাকা অফিস ::

ওষুধ প্রশাসনের ব্যর্থতায় দেশে রোগীদের এতো ভোগান্তি বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। ‘চোখ হারানো’ ২০ জনকে ক্ষতিপূরণ দেয়া সংক্রান্ত রুলের শুনানি শেষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজি) দেয়া প্রতিবেদনের আলোকে গতকাল সোমবার এমন মন্তব্য করেন আদালত।

একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত মামলায় জারি করা রুলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২১ অক্টোবর দিন ঠিক করেন আদালত। ‘চোখ হারানো’ ২০ জনকে ক্ষতিপূরণ দেয়া সংক্রান্ত রুলের শুনানি শেষে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এই আদেশ দেন। আদালতে গতকাল সোমবার রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত।

অপরদিকে ইম্প্যাক্টের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম. আমীর উল ইসলাম, সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। এছাড়া ওষুধ কোম্পানির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শ. ম রেজাউল করিম।

আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত জানান, চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা প্রাপ্ত ‘চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ২১ অক্টোবর রায় ঘোষণা করবেন আদালত।

তিনি আরও জানান, শুনানির এক পর্যায়ে আদালত ওষুধ প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে দেশে রোগীদের এত ভোগান্তি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। রিটের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, চোখ অপারেশনে যে ওষুধ ব্যবহার হয়েছে তার রেজিস্ট্রেশন (তালিকা ভুক্তি) করা যায়নি। প্রতিবেদনে এ তথ্য থাকায় আদালত ওষুধ প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেন।

একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন! শীর্ষক শিরোনামে ২৯ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য রুল জারি করেন। পরে গত ১ এপ্রিল চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা প্রাপ্ত ‘চোখ হারানো’ ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি করে টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না’ তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্‌থ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী–পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন।

তবে, বাসায় ফিরেই ২০ জন রোগীর চোখে ইনফেকশন দেখা দেয়। এসব রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ মার্চ অপারেশনের পর ৬ মার্চ তাদের প্রত্যেককেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। বাড়ি ফিরে ওই দিনই কারও বিকেলে,কারও সন্ধ্যায়, কারওবা রাত থেকে চোখে জ্বালা–যন্ত্রণা ও পানি ঝরতে শুরু করে। পরদিনই তারা ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে যোগাযোগ যান। তাদের তখন গুরুত্ব না দিয়ে কোনোরকম চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠলে ফের তারা ইম্প্যাক্টে যান। সেখান থেকে তখন কয়েকজনকে স্থানীয় এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

স্থানীয় ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। তাদের মধ্যে ৪ জন নিজ উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্ট থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ রোগীকে ঢাকায় নেয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে তাদের চোখের এতোটাই ক্ষতি হয় যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়েছে।’

পাঠকের মতামত: