কালের কন্ঠ অনলাইন :: রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) এনামুল হকের দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে গত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ভবানীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদুজ্জামান নাহিদ। এতে এমপি সমর্থকদের রোষানলে পড়েন তিনি। এমপির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ও বাগমারা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ আইসিটি আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় ৯৬ দিন জেলহাজতে ছিলেন নাহিদ। অথচ সেই দ্বিতীয় বিয়ের কথা এখন এমপি এনামুল নিজেই স্বীকার করছেন। তবে দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার লিজার সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
দ্বিতীয় দফায় দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি জনসমক্ষে আনায় এরই মধ্যে লিজার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইসিটি আইনে এ মামলাও করেছেন এমপি এনামুলের পিএস আসাদ। মামলায় লিজার বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা চাঁদা চেয়ে এমপিকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ২৯ মে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এমপি এনামুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথা জানান লিজা।
শুধু ছাত্রলীগ নেতা নাহিদ ও দ্বিতীয় স্ত্রী লিজাই নন, এমপি এনামুলের বিপক্ষে যাঁরাই অবস্থান নিয়েছেন, তাঁদের নামেই দেওয়া হয়েছে মামলা। আর তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নিজ দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই সংখ্যায় বেশি। গত প্রায় ১১ বছরে অন্তত ২০টি মামলা দায়েরের তথ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী নেতাকর্মীরা। এসব মামলায় অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মীকে কারাবরণ করতে হয়েছে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার দায়ের করা মামলার আসামি এমপি এনামুলের দ্বিতীয় স্ত্রী লিজা দাবি করেছেন, এমপি এনামুল এখনো তাঁর স্বামী। কারণ তিনি তাঁর স্বামীকে তালাক দেননি। এমপি ভুয়া কাগজ তৈরি করে তালাকের বিষয়টি প্রচার করছেন। এর জন্য তিনি থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে লিজা অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু এবং তাহেরপুর পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন ভবানীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদুজ্জামান নাহিদ। সে সময় তিনি ফেসবুকে এমপির দ্বিতীয় বিয়ের তথ্য তুলে ধরে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এমপির হয়ে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদ আইসিটি আইনে মামলা করেন। সেই মামলায় কোনো তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি নাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে অভিযোগ আছে। ৯৬ দিন কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এখনো মামলাটি চলছে।
মামলার বিষয়ে নাহিদ বলেন, ‘এমপির বিয়ে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় আমি জেল খেটেছি। তবে এখন এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আমি এমনিতেই অনেক বিপদ পার করেছি। আমাকে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে।’
জানতে চাইলে মামলার বাদী আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপির পিএস আসাদ বলেন, ‘এমপির বিয়ে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় আইসিটি আইনে নাহিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। তবে কত তারিখে মামলাটি করেছি বলতে পারব না।’
এমপি এনামুলের দ্বিতীয় স্ত্রী লিজা গত ২৯ মে ফেসবুকে এমপি এনামুলের সঙ্গে তাঁর বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘এমপি সাহেব আমার হাজবেন্ড, এই কথা কারো কাছে যদি অবিশ্বাস্য মনে হয়, তাহলে বিয়ের কাগজপত্র দেখতে পারেন।’
লিজা আরো দাবি করেন, ‘২০১৮ সালের ১১ মে এমপি এনামুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এ ছাড়া প্রথমে প্রায় আট বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয় মৌখিকভাবে এমপির বাগমারার শিকদারবাড়িতে। কিন্তু লিখিত বিয়ের পর গত দুই বছর ধরে তিনি লিজাকে গোপনে স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।’
এরপর গত ১ জুন লিজা তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘আপনারা সবাই ভাবছেন, আমি থেমে গেছি। আমি থেমে যাই নাই। সংসদ সদস্যের ভক্তরা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে জেলে দেওয়া হবে, এমন বলছেন। এবং মাননীয় সংসদ সদস্য গতকাল আমাকে বলেছেন, আমি গণমাধ্যমে এসেছি তাই আমাকে আজ উনি ডিভোর্স দিবেন।’
লিজা গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠ’র কাছে অভিযোগ করেন, ‘এমপি আমাকে নিয়ে খেলেছেন। যখন তার প্রয়োজন হয়েছে তখন কাছে নিয়ে রেখেছেন। এখন প্রয়োজন শেষ দূরে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন।’ এর বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার নামে তাঁর পিএসকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন। আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছি।’
তবে এমপি এনামুল হক বলেন, ‘আমার একসময়ে বিয়ের সম্পর্ক ছিল ওই নারীর সঙ্গে। এখন নাই। তাঁকে সম্পূর্ণ দেনমোহর পরিশোধ করেছি আমি। কিন্তু তার পরও তিনি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এমপি বলেন, ‘বাগমারায় যাঁরা বিভিন্ন অপরাধ করেছেন, তাঁদের নামে সেই সব অভিযোগে মামলা হয়েছে। এখানে আমার কারণে কারো বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। আমি কাউকে মামলা করার পরামর্শ দিইনি।’
পাঠকের মতামত: