ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

এনজিও’র চাকুরী হারানোর চিন্তায় স্ট্রোক করে মৃত্যুর অভিযোগ

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের দরগাহ বিল গ্রামের মৃত দুদু মিয়ার কন্যা মরিয়ম বেগম (২৬) আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা এম.এস.এফ (মেডিসিন সেন্স ফ্রন্টিয়ার) এ চাকুরী নিয়েছিল বিগত সালের এপ্রিল মাসে। কর্মস্থল ছিল কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প। বৃহস্পতিবার ৩১ জানুয়ারি মরিয়ম বেগমকে তার চাকুরী থেকে কর্তৃপক্ষ বিনাকারণে অমানবিকভাবে বিদায় দিয়ে দেয়।
মরিয়ম বেগমর সাথে একই এলাকার মওলানা রশিদ আহামদের পুত্র ওবায়দুল হকের বিয়ে হয় ২০১৩ সালে। তাদের এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তানও রয়েছে। কিন্তু তিন মাস আগে বিভিন্ন কারণে মরিয়ম বেগমের সাথে ওবায়দুল হকের ডিভোর্স হয়ে যায়। এ অবস্থায় অবস্থাপন্ন ভাইদের সাথেই দুই শিশুসন্তান নিয়ে মরিয়ম বেগম চাকুরীর অর্থ ও ভাইদের সহযোগিতায় কোনরকমে চলতো। কিন্তু বৃহস্পতিবার যখন এমএসএফ-এর চাকুরী থেকে মরিয়ম বেগমকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিদায় করে দেয়া হয়, তখন মরিয়ম বেগম অস্বাভাবিক ভাবে চিন্তিত হয়ে ভেঙ্গে পড়ে। মরিয়ম বেগমের সহকর্মীরা জানিয়েছেন-তাকে চাকুরীতে রাখার জন্য এমএসএফ-এর নিয়োগকর্তাদের কাছে মরিয়ম বেগম অনেক ধর্না দিয়েছে। কিন্তু এমএসএফ কর্তৃপক্ষ অসহায় মরিয়মের কোন আকুতি শোনেননি। দু’সন্তানের জননী মরিয়ম বেগম তখন গভীর চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে। ফলে ভাইয়ের বাড়িতে শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মরিয়ম বেগমের বুকে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। তখন মরিয়মের ভাইয়েরা উপায়ন্ত নাদেখে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে রওয়ানা দিলে পথিমধ্যে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মরিয়ম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ( ইন্নলিল্লাহি–রাজেউন)। শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর দরগাহ বিলে মরিয়মের নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।এদিকে, অসহায় মরিয়ম বেগমের আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মরিয়মের মৃত্যুর জন্য একটি পক্ষকে দায়ী করে ঝড় তোলা হচ্ছে। শুক্রবার উখিয়ার সর্বত্র মরিয়মের রহস্যজনক মৃত্যুর খরব ছিল “টক অব দ্যা উখিয়া”। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) উখিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার অভিযোগ করেছেন-মরিয়ম বেগম চাকুরী হারানোর ধকল সইতে নাপেরে স্ট্রোক করেছেন বলে তাঁর ধারণা। মরিয়ম বেগমের জানাজার নামাজ

পড়ে এসে এ প্রতিবেদকের কাছে মুঠোফোনে তিনি বলেন-রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত অধিকাংশ এনজিও’র মানবিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। তারা যখন তখন যেকোন অনৈতিক ও বিতর্কিত কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেননা।
উখিয়া-টেকনাফ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার অসহায়া মরিয়ম বেগমের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে অবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী ও উখিয়া উপজেলার নাগরিক এডভোকেট সৈয়দ মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন-মরিয়ম বেগমের আকস্মিক মৃত্যু খুবই অমানবিক। রোহিঙ্গা শরনার্থী আগমনের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠী যে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ সেটা এনজিও গুলো কোনসময় উপলদ্ধি করতে চায়নি। তিনি বলেন-এভাবে এনজিও সমুহের বেপরোয়া তৎপরতা চলতে থাকলে কিছুদিন পর উখিয়ার স্থায়ী বাসিন্দারা নিজ আবাসভূমিতেই পরবাসী হয়ে যাবেন বলে এই সিনিয়র আইনজীবী আশংকা পোষন করেন। এডভোকেট সৈয়দ মুহাম্মদ আবু তাহের দ্রুত চর্তুপক্ষীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে মরিয়ম বেগমের মৃত্যুর আসল কারণ বের করা দরকার বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
তবে এ বিষয়ে অনেক চেষ্টা করেও শুক্রবার হওয়ায় এমএসএফ কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

পাঠকের মতামত: