ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ঈদ সামনে রেখে অস্থির পেঁয়াজের বাজার

অনলাইন ডেস্ক ::

রমজানের পর একটা নির্দিষ্ট সময়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজের চাহিদা তৈরি হয় কোরবানির ঈদে। আর এই উৎসব সামনে রেখেই ধাপে ধাপে বাড়ছে মসলাজাতীয় পণ্যটির দাম। প্রায় দুই মাস ধরে বাড়তে বাড়তে এই দাম পৌঁছে গেছে ৬০ টাকায়। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা কেজি দরে। আর আমদানীকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজি দরে। গত রমজান মাসের শেষ দিকে দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা এবং আমদানীকৃত পেঁয়াজের দাম নেমে এসেছিল ২৫-৩০ টাকায়।

রাজধানীর খুচরা বাজারের কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা সাধারণত দুটি সময়ে বাজারকে অস্থির করে তোলে। রমজান মাসে ও কোরবানির ঈদের আগে। কোরবানির ঈদের আর খুব বেশিদিন বাকি নেই। তাই ব্যবসায়ীরা এটাকে লক্ষ্য বানিয়ে থাকতে পারে।

নিয়মিত বাজার অভিযান পরিচালনা ও বাড়তি মনিটরিংয়ের কারণে গত রোজার শুরুতে পেঁয়াজের বাজার চড়লেও পরে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েছিল পেঁয়াজের দাম কমিয়ে আনতে। তবে এখন আবার বাজারকে অস্থির করে তুলছে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের বাজার বিশ্লেষণের তথ্যে দেখা গেছে, রোজার ঈদের পর থেকেই ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। কেজিতে পাঁচ টাকা করে বাড়তে বাড়তে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই আমদানি করা পেঁয়াজের দাম উঠে যায় ৩৫ টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫-৫০ টাকায়। এই দাম আরো বেড়ে জুলাইয়ের শেষে হয়ে গেছে দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ টাকা। সংস্থাটির তথ্য মতে, গত এক মাসেই দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২২ শতংশের বেশি। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশের বেশি। বর্তমানে দেশি ও আমাদানি করা পেঁয়াজের যে দাম তা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ২৯.৪১ এবং ২৩.০৮ শতাংশ বেশি।

আমাদের দিনাজপুর প্রতিনিধি এমদাদুল হক মিলন জানান, হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে নাসিক, ইন্দোর ও রাজস্থান জাতের ছোট ও বড় আকারের পেঁয়াজ আমদানি করছে। দাম নির্ধারণ করা না থাকলেও প্রতি টন পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য এলসি করা হচ্ছে ২৫০ ডলার হিসাবে। ৮৪ টাকা বাট্টা হিসাবে এক টন পেঁয়াজের দাম পড়ছে ২১ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২১ টাকা কেজি।

এরপর সব খরচ মিলে রাজধানীর বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরো কম হওয়া উচিত। কিন্তু খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, ‘বেশ কিছুদিন ধরে পেঁয়াজের দাম একই রকম ছিল। প্রতি টন পেঁয়াজের জন্য ২০০ ডলারে এলসি খোলা হচ্ছিল। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২২ টাকা করে বিক্রি হয়েছিল। সম্প্রতি ভারতে আবারও পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। গত সোমবার ২৫০ ডলারে এলসি খোলা হয়েছে। এতে করে দাম বেড়েছে।’

শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মজুদ কম থাকার কারণে দিন দিন দাম বেড়েছে। যদিও দেশে একটি সিজনে উৎপাদিত পেঁয়াজ সারা বছরই বিক্রি হয়। নিজস্ব উৎপাদনের পর যে পরিমাণ ঘাটতি থাকে তা আমদানি করে মেটানো হয়।

তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন (বিবিএসের তথ্য মতে); যা ছিল এর আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় দেড় লাখ টন বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন আরো বেশি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) গোলাম রহমান বলেন, ‘এই সময়টাতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ দেখছি না। বাজারে কোনো সমস্যা রয়েছে কি না সেটা মনিটরিং করে দেখা উচিত। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করে থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

পাঠকের মতামত: