ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

‘আসল’ জিয়া মহাবিপাকে, সমাজের অনেক বিত্তশালী প্রতারণার শিকার

untitled-14_207798অনলাইন ডেস্ক :::

‘আমি মেজর জিয়া বলছি। আমার কিছু লোক কারাগারে আটক আছে। তাদের ছাড়াতে ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন। ১৫ লাখ টাকা ম্যানেজ হয়েছে। আপনি তো অনেক টাকার মালিক। তাড়াতাড়ি পাঁচ লাখ টাকা পাঠান।’ এভাবেই অনেকের কাছে ফোনে চাঁদা চাওয়া হয়। চাঁদা না দিলে স্ত্রী-সন্তানকে অপহরণ এবং গাড়িতে বোমা রেখে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

 
কিছুদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন আহমেদ পরিচয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ নম্বর সেক্টরের অধীন সুন্দরবন এলাকার সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়া উদ্দিন। এখন তার ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে একাধিক প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ভুয়া জিয়ার প্রতারণায় এখন আসল মেজর জিয়া উদ্দিন মহাবিপাকে।

গতকাল যোগাযোগ করা হলে মেজর (অব.) জিয়া বলেন, তার নাম ব্যবহার করে প্রতারণার অনেক অভিযোগ তিনি শুনেছেন। প্রতারক চক্রকে গ্রেফতারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষপর্যায়ে বিভিন্ন সময় যোগাযোগও করেছেন। প্রায়ই পরিচিত ব্যবসায়ী, ব্যাংকারসহ অন্যরা ফোন করে জানাচ্ছেন তার নামে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে।

জিয়া উদ্দিন আরও বলেন, একদিন তার কাছে একজন ফোন করে বলে, সে মেজর জিয়া উদ্দিন। তার লোকজন ছাড়াতে টাকা লাগবে। এরপর জিয়া উদ্দিন পরিচয়ে প্রকৃত জিয়ার কাছে চাঁদা দাবি করে ওই প্রতারক জিয়া।

কেন আপনার নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করা হচ্ছে_ এই প্রশ্নে তিনি বলেন, হয়তো আমার পরিচিতির জন্য, অথবা ভয়। আর সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন এমন ৭-৮ কর্মকর্তার নাম জিয়া। হয়তো সেটিও প্রতারকদের একটি কৌশল।

এরই মধ্যে জিয়া উদ্দিন পরিচয়ে প্রতারণার শিকার অনেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগও দায়ের করেছেন। সমাজের অনেক বিত্তশালী প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সংঘবদ্ধ চক্রের কেউ কেউ এরই মধ্যে আটক হয়েছে। অনেককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মাদারীপুরের রাজৈর, ফরিদপুর ও শরীয়তপুরের কয়েকটি গ্রামে বসে একাধিক চক্র মোবাইলে ফোনে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অর্থ। জানা গেছে, ফরিদপুরের রেজাউল ও অখিল নামের দুই ব্যক্তি এ চক্রের মূল হোতা। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতারক চক্রের একটি দল রাজধানীর মতিঝিল ও ফকিরাপুলের নিম্নমানের হোটেলে বসে দিনের পর দিন প্রতারণা করছে। ভুয়া তথ্য দিয়ে মোবাইল সিম ও বিকাশ নম্বর নিবন্ধন করে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে আসছে। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে অর্থ চাওয়া প্রতারকদের একটি কৌশল। কিছুদিন আগে ভুয়া র‌্যাবের ডিজি ধরা পড়ে।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, মেজর জিয়া উদ্দিন পরিচয়ে নানাভাবে লোকদের প্রতারণা করা হচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে এ ধরনের ৬০টির মতো অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ চক্রের অধিকাংশ প্রতারক ঢাকার বাইরে থাকে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, মোবাইল ফোনে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেলে পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে থাকে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাইনুল ইসলাম বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা নানা কৌশল ব্যবহার করছে। সচেতন হলে এই চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কিছু ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে এরই মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

উত্তরা এলাকার বাসিন্দা এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সিনিয়র সাংবাদিক শাহ আলমগীর জানান, কয়েকদিন আগে তাকেও মেজর জিয়া উদ্দিন পরিচয় দিয়ে একই ভাষায় চাঁদা দাবি করা হয়। এ সময় তিনি ওই ব্যক্তিকে বলেন, মেজর জিয়া উদ্দিন নামে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে তিনি চেনেন, তার নম্বর তার কাছে আছে। তিনি কখনোই চাঁদা দাবি করতে পারেন না। তার নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করলে ওই ব্যক্তি ফোন কেটে দেয়।

‘আমি সুব্রত বাইন বলছি। ফাইভ স্টার গ্রুপের ডন। আমাকে চিনিস। তোর স্ত্রী ও এক বছরের মেয়েকে আমি চিনি। তুই কোথায় চাকরি করিস তাও জানি। আমাদের লোকজন হাজতে আছে; তাদের ছাড়াতে টাকা লাগবে। তুই ছোট মানুষ। তুই ১০ লাখ টাকা দিবি। নইলে স্ত্রী ও সন্তানকে মেরে ফেলব।’ রফিকুল ইসলাম নামে খিলগাঁওয়ের এক ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে দুই লাখ ৬৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।

কয়েকজন গ্রেফতার :সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মোবাইল ফোন প্রতারক চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলো_ রুবেল মুন্সী, শহীদ মুন্সী, মহসীন, ইসমাইল মাতব্বর, ইসরাফিল মাতব্বর ও শরীফুল ইসলাম। মোবাইল ফোনে প্রতারণা করে তাদের কেউ কেউ গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে। এ চক্রের অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সমকাল

পাঠকের মতামত: