বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় পরিবেশের বিরুপ প্রভাবের কারণে গিরি–ঝর্ণার পানি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির প্রকট সংকট দেখা দিয়েছে। অপরিকল্পিত জুম চাষ,নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও ঝিরি–ঝর্ণা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পানি সংকটের মূল কারণ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলো খাবার পানি সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অপরদিকে পর্যাপ্ত অর্থবরাদ্দ না থাকায় আলীকদম উপজেলা সদরসহ তিন উপজেলায় পানি সরবরাহ প্রকল্পগুলোর চলমান কাজ মুখ থুবড়ে পড়ছে। জানা গেছে, প্রতিবছর শত শত পাহাড়ে অপরিকল্পিত ভাবে জুমচাষের প্রাক্কালে গাছ–গাছালি পুড়িয়ে ফেলা হয়। জুম চাষের ফলে একদিকে পাহাড় ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে মাটির ক্ষয় হচ্ছে অত্যধিক। পরিবেশবিদরা বলছেন, পাহাড়ে ভূ–উপরিভাগ উষ্ণতার ফলে ভূ–গর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক নীচে নেমে যায়। এ ছাড়াও বৃক্ষ নিধন এবং ঝিরি–ঝর্ণা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন পানি সংকটের অন্যতম কারণ। ঝিরিতে পাথরের মজুদ কমে যাওয়ায় এবং পাহাড়ে পর্যাপ্ত গাছ–গাছালি না থাকার কারণে পানির উৎসস্থল ক্রমেই ধংস হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে আলীকদমসহ ৩টি উপজেলায় খাবার পানির প্রকট সংকট বিরাজ করছে।
জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম পাড়ার বাসিন্দা চিমং মারমা এবং হাতিমা ত্রিপুরা জানান, তারাছা ইউনিয়নের ৭টি পাহাড়ি পাড়ার কাছে প্রাকৃতিক ঝিরি–ঝর্ণাগুলো পানি শুন্য হয়ে পড়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক পাড়াগুলো সফরকালে তাদের এলাকায় বিরাজিত খাবার পানি সংকটের কথা জানান।
গত ৬ বছর ধরে আলীকদম পানি শোধানাগার প্রকল্প চালু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে আলীকদম উপজেলা সদরের ৩০ হাজার মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকটে রয়েছেন। পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২০১১ সালে প্রকল্প কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ইতিমধ্যে ৭০ ভাগ কাজ শেষ হলেও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পানি সরবরাহ দিতে পারেনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। ফলে উপজেলার অসংখ্য নারী–পুরুষকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ৬ বছর আগে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়ে কাজ শুরু করে। মাঝপথে বরাদ্দ না থাকার কারণে প্রকল্পটির পুরো কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন জানান,আলীকদম পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য ৬ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকার প্রকল্পসহ নাইক্ষ ্যংছড়ি ও থানছি সদরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য ২১ কোটি টাকার ৩টি প্রকল্প সরকারের উচ্চ মহলে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বরাদ্দ আসলেই বাকী কাজ শুরু করা হবে। পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি বলেন,পানি প্রকল্পগুলোর কাজ ইতিমধ্যেই অধেক শেষ হয়েছে, বাকী কাজও এক বছরের মধ্যে শেষ হবে।
পাঠকের মতামত: