ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

‘আমি আবার স্কুলে যেতে চাই, বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে চাই’

সুনীল বড়ুয়া, রামু ::  শয়ন ক্লাস থ্রিতে পড়ে। বয়স প্রায় নয় বছর। ছয়মাস বয়স থেকেই নানীর কোলেই বেড়ে ওঠছে সে। ছোট বেলা থেকে বাবা-মায়ের আদর-স্নেহ,ভালোবাসা না পেলেও মামার বাড়িতে ভালই কাটছিল শয়নের শিশুকাল।স্কুলে পড়া-লেখা, সহপাঠিদের সঙ্গে খেলাধূলা সব কিছুই স্বাভাবিক ছিল তার। সমপ্রতি হঠাৎ চোখে সমস্যা দেখা দেয় শয়নের। চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করে। সুর্যের আলোতে বের হতে পারেনা শয়ন। যে কারণে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার। এমন পরিস্থিতিতে শয়নের দিন মজুর মামা তাকে নিয়ে কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও সুফল পাওয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ঘরের কোনে অন্ধকারেই কাটছে শয়নের জীবন। বাড়ির ওঠোনে তখনও চোখ বন্ধ করেই ছোট্ট ফুটফুটে শিশু শয়ন বলে, ‘আমি আবারও স্কুলে যেতে চাই,বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে চাই। আপনারা আমার চোখ ভাল করে দিন’।

কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের উত্তর ফতেখাঁরকুল বনিক পাড়ায় দিন মজুর মামার বাড়িতেই বেড়ে শয়ন মল্লিক।তার মামা সুজিত ধর জানান, আমি দিন মজুরের কাজ করি। প্রতিদিন যা আয় করি তা দিয়ে সংসার চলে না। তবুও সাধ্যমত আমি চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। তিনি বলেন,হাতে আর কোন টাকা পয়সা নেই। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলেছেন,তাকে ভারত নিয়ে গিয়ে একটি অপারেশন করাতে হবে। এতে তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হতে পারে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে আমি অপারগ। তাই আপনাদের প্রতি আমার আকুতি আমার এই ভাগিনার ফুটফুটে চেহারার দিকে তাকিয়ে আপনারা কিছু একটা করুন। শয়নের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেতে আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। ‘ছোট বেলা থেকে কোন সমস্যা ছিলনা শয়নের। কিন্তু সমপ্রতি হঠাৎ করে ওর চোখে সমস্যা দেখা দেয়।
শয়নের নানা সুখেদা ধর জানান, শয়নের বয়স যখন ৬ মাস তখন তার বাবা-মায়ের সংসারে বিচ্ছেদ ঘটে। পরে দুইজনই নতুন করে বিয়ে করে। সেই ছয়মাস বয়স থেকেই শয়ন আমার কোলে বড় হয়। আমি কোন দিন তাকে বাবা-মায়ের অভাব বুঝতে দিইনি। ‘ঠিকঠাক মত লেখাপড়াও চালিয়ে আসছিল শয়ন। সে কক্সবাজার সাহিত্যিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস থ্রিতে পড়তো। আমারও খুব স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের আদর স্নেহ ভালোবাসা বঞ্চিত ছেলেটাকে লেখা পড়া করিয়ে মানুষের মত মানুষ করবো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আর কিছুই হবেনা। শয়ন চোখে দেখতে পারছেনা কথাটি মনে পড়লেই আমার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে’। সুখেদা ধরের আকুতি, আমাদের কাছে নেই বলে তিন-চার লাখ টাকা বেশি। কিন্তু সমাজে এমন বিত্তবানও আছেন যারা চাইলে একজনেও এই টাকা আমাদের সাহায্য করতে পারেন। আপনাদের কাছে আমার আবেদন ‘আপনারা আমার নাতির চোখে আবারও আলো ফিরিয়ে দিন। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ,আমাদের এলাকার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমলসহ সকলের কাছে আকুতি জানাই,আপনারা আমার আদরের নাতিটিকে বাঁচান।

পাঠকের মতামত: