গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত বলে উচ্চ আদালতের রায় এসেছে। আদালত বলেছেন, একজন মসজিদের ইমামের দায়িত্ব হলো মুসলমানদের কাছে ইসলামের সঠিক জ্ঞান পৌঁছে দেওয়া। তিনি এমন কোনো জ্ঞান বা বয়ান দেবেন না, যা প্রচলিত ফৌজদারি আইনের পরিপন্থী।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেনের যৌথ বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ের সময় আদালত কিছু পর্যবেক্ষণ দেন।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, যদি কেউ ইসলাম ধর্ম, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বা অন্য কোনো ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক বা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই।
শরিয়া আইন প্রসঙ্গে আদালত বলেন, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় রয়েছে।
দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়ে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, এ মামলা যুক্তিতর্ক ও মামলার নথি অনুযায়ী দেখা গেছে, মুফতি জসীমুদ্দীন রাহমানী ছাড়া সব আসামিই ছিলেন মেধাবী। কিন্তু তারা এ পথে কেন গেলেন, তার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ধরনের মেধাবী ছাত্রদের বিপথে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার অন্যতম দায়ী বলে মনে করেন আদালত।
আদালত আরো বলেন, বর্তমানে পরিবারগুলো জীবনের বিভিন্ন তাগিদ নিয়েই ব্যস্ত। নিজেদের সন্তানদের খোঁজখবর নেওয়া ও তাদের সঠিক পথে পরিচালনার বিষয়ে দায়িত্ব পালন করছে না। সন্তানদের মানসিকতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা কী চায়, তা বুঝতে হবে। এছাড়া অভিভাবকদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষকের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করতে হবে।
পরিবারের পাশাপাশি সামাজিক শক্তিকে আরো সচেতন হতে হবে বলে মতে দেন আদালত। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দেশীয় অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে হবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শকের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে ন্যায়নিষ্ঠ ও দক্ষ পুলিশ সদস্যকে তদন্তের দায়িত্ব দিতে হবে, যাতে করে নির্ভুলভাবে তদন্তের কাজ হয়।
আজ এ মামলার রায় বাংলায় পড়ে শোনান আদালত। আদালত বলেন, মামলার আপিলের শুনানি ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল। মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানিয়ে এ মামলায় রায় বাংলায় ঘোষণা করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: