ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

অরিত্রির স্বজনদের তীব্র ক্রোধে পালালেন ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ

অনলাইন ডেস্ক ::    ভিকারুননিসা কলেজের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার খবর শুনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে স্বজনদের রোষানলের মুখে পড়েন কলেজটির অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস। এসময় দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান তিনি।

জানা যায়, সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস। সেখানে তিনি অরিত্রির স্বজনদের রোষানলের মুখে পড়েন। এ সময় তারা প্রিন্সিপালের গাড়ি ঘিরে রাখেন। কিছুক্ষণ পর তিনি দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।

স্কুলে নিজের চোখের সামনে বাবার অপমান সইতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অরিত্রি। সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি। মূমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী একজন কাস্টসম (সিঅ্যান্ডএফ) ব্যবসায়ী। মা বিউটি অধিকারী গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলায়। সে পরিবারের দুই বোনের মধ্যে বড় অতিত্রি। অরিত্রির ছোট বোন ঐন্দ্রিলা অধিকারীও একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

নিহতের বাবা জানান, গতকাল রবিবার পরীক্ষা চলার সময় অরিত্রির কাছে একটি মোবাইল পাওয়া যায়। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার পরীক্ষার সময় অরিত্রির সঙ্গে তারা স্কুলে যান। পরে তাদের ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে গেলে তারা মেয়ের নকল করার ব্যাপারে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল কিছু করার নেই বলে তাদের প্রিন্সিপালের রুমে যেতে বলেন। সেখানে গিয়েও তারা ক্ষমা চান। কিন্তু প্রিন্সিপালও তাতে সদয় হননি। এসময় স্কুল পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্যও ছিল। পরে তার মেয়ে প্রিন্সিপালের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পরের দিন টিসি নিয়ে আসতে বলেন। এ সময় আমি মেয়ের সামনেই কেঁদে ফেলি। অরিত্রি হয়তো আমার ওই কান্না-অপমান মেনে নিতে পারেনি।

এই অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। আজ দুপুরে বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান জানান, আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হবে।

ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়েছে। তার গলায় দাগ ছিল। তার ‘নেক টিস্যু’ সংগ্রহ করা হয়েছে, তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

স্কুলের গভর্নিং কমিটির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুদার বলেন, ‘ঘটনাটি মর্মান্তিক। দুঃখজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি, তবে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’

এ ব্যাপারে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে ফোন দিতে বলে লাইনটি কেটে দেন।

এদিকে সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা, তবে প্রতিবাদের সরব সহপাঠীরা। প্রশ্ন তুলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষের নৈতিকতা ও গভর্নিং বডির ভূমিকা নিয়ে। ঘটনার নায্যবিচার দাবিতে মঙ্গলবার থেকে পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছে অরিত্রির সহপাঠীরা।

পাঠকের মতামত: