ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

সেই ডাকাতের ডেরা থেকে পুলিশ-বিজিবির পোশাক উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক ::  বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গারা মিলেমিশেই পুলিশ ও বিজিবির পোশাক পরে টেকনাফ সীমান্তে ডাকাতি, সন্ত্রাসী ও অপহরণের কাজ করে আসছিল। এমনকি রোহিঙ্গা ডাকাতরা পুলিশের পোশাক পরলে আবার স্থানীয় বাংলাদেশি ডাকাত দলের সদস্যরা বিজিবির পোশাকেই চালাত অপারেশন। সীমান্তে প্রায়শ পুলিশ এবং বিজিবির পোশাক পরিহিত দলের নানা অপকর্ম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তর্ক বিতর্ক চলে আসছিল।

শেষ পর্যন্ত আজ বুধবার ভোরে পুলিশের পরিচালিত অভিযানে বিপুল পরিমাণে পুলিশ ও বিজিবির পোশাক উদ্ধারের পরই এমন বিতর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে। পুলিশ-বিজিবির একদম নতুন পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী দেখে খোদ টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ নিজেই হতবাক হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির পোশাক পরিহিত ব্যক্তিদের নানা কথা শুনু গেলেও বাস্তবে আজই রহস্য উদঘাটিত হয়েছে সেই পোশাক রহস্যের।

ওসি প্রদীপ বলেন, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী গাজীপাড়ার পশ্চিম দিকে পাহাড়ের পাদদেশে অপহৃত স্থানীয় গ্রামবাসী কৃষক (ভিকটিম) সাহেদ ও ইদ্রিসকে নিয়ে রোহিঙ্গা দুর্ধর্ষ আবদুল হাকিম ডাকাত গোপনে অবস্থান করার সংবাদ পেয়ে অভিযান চালানো হয়।

ওসি জানান, ডাকাত দলকে পরাস্থ করতে পুলিশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সময় বহু সংখ্যক স্থানীয় এবং রোহিঙ্গা ডাকাত উক্ত ডেরা থেকে পালিয়ে গেছে।
দুই অপহৃত কৃষককে উদ্ধারে গাজি পাহাড়ে ভোলাইয়া বৈদ্য গ্রুপ নামের স্থানীয় ডাকাত দলের ডেরায় পৌঁছা মাত্রই পুলিশের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে আস্তানার রোহিঙ্গা ও স্থানীয় ডাকাত দল। টেকনাফ থানার পুলিশও এ সময় পাল্টা গুলি বর্ষণ করতে থাকে। পুলিশ ও ডাকাত দলের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ৩ জন ব্যক্তিকে ঘটনাস্থল হতে উদ্ধারপূর্বক দ্রুত চিকিৎসার জন্য টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করত উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ডাকাতরা হচ্ছেন টেকনাফের রঙ্গিখালী জুম্মাপাড়ার মৃত আব্দুল মজিদ প্রকাশ ভোলাইয়া বৈদ্যের পুত্র সৈয়দ আলম (৩৮) ও নুরুল আলম (৩৭) এবং একই এলাকার সাব্বির আহমদের পুত্র মো. মনাইয়া (২২)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি একনলা বন্দুক, দুইটি থ্রি কোয়াটার বন্দুক, দশটি এলজি, একটি বিদেশি পিস্তল, এগার রাউন্ড রাইফেলের গুলি, আট রাউন্ড পিস্তলের গুলি, দুইশত পাঁচ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, বাহাত্তর রাউন্ড কার্তুজের খোসা, ছাপান্ন হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, তিন সেট বিজিবি ও দশ সেট পুলিশের পোশাক।

অভিযানের সময় পুলিশ কর্তৃক গুলি বর্ষণের পরিমাণ-শটগান থেকে ৩২০ রাউন্ড, পিস্তল থেকে ০৯ রাউন্ড, চায়না এসএমজি থেকে ২৫ রাউন্ড, চায়না রাইফেল থেকে ১৫ রাউন্ড ফায়ার এবং ০৯টি সাউন্ড গ্রেনেড এর বিষ্ফোরণ ঘটানো হয়। অভিযানে আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- পুলিশ পরিদর্শক (নি.) জনাব লিয়াকত আলী, এসআই (নিরস্ত্র) মশিউর রহমান, এএসআই (নিরস্ত্র) সনজীব দত্ত, এএসআই (নিরস্ত্র) মিঠুন কুমার ভৌমিক।

পাঠকের মতামত: