ষ্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে :::
সিলেটে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুমিবিরোধকে উস্কে দিচ্ছে রেকর্ডরুম কর্তা-ব্যক্তিরা । পুরনো রেকর্ড পর্চা ও ভলিয়মে জালিয়াতি এবং টেম্পারিং করে একই ভুমির পর্চার জাবেদা নকল একাধিক ব্যাক্তির নামে দিচ্ছেন তারা। ফলে এ নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক বিশৃংখলা। ঘটছে দখলবাজি ও খুন-খারাপির পাশপাশি আইনশৃংখলার অবনতি। এহেন জালিয়াতির বিনিময়ে রেকর্ডরুমের কর্তা-ব্যক্তিরা কামাই করে চলেছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। রেকর্ডরুমের রেকর্ডকিপার আদুস সত্তার এবং নকল নবিশ সবিতা,আব্দুল গণি ও আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সিলেট জেলা ভুমি রেকর্ডরুমে এ ধরনের একটি জালিয়াতি নিয়ে ঘটে গেছে তুলকালাম কান্ড।
জানা গছে, সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার হেমু মৌজার নমশূদ্র পাড়ায় সুরেন্দ্র নমশূদ্র ও লাবন্য সরকারের মধ্যে বাড়ির জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছিল। সুরেন্দ্র নমশূদ্ররা তাদের পূর্বপুরুষের উত্তরাধিকারী হিসেবে হেমু মৌজাস্থ ২৯৯ খতিয়ানের ১৩১,১৪১,১৪৪ ও ১৪৬ দাগের বাড়িতে বসবাস করে আসছেন।
বিগত পাকিস্তান সেটেলমেন্ট জরিপে সুরেন্দ্রদের পূর্বপুরুষ সুনারাম, তরণী রজণী ও নদীয়ার নামে ওই বাড়ির দখল-মালিকানা রেকর্ডভুক্ত হয়। রেকর্ডসূত্রে তমাদি মুদ্দতে সুরেন্দ্ররা ওই বাড়িতে বসবাস ও ভোগ দখল করে আসছেন। সম্প্রতি প্রতিবেশী লাবণ্য সরকার লেবই ওই বাড়ির ভুমি তার নিজের বলে দাবি করে বসেন। দাবি আদায়ে তিনি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা আব্দুল্লাহর দারস্থ হন। আব্দুল্লাহ উভয় পক্ষের কাছ থেকে ৬লাখ টাকা জামানত নিয়ে একটি সালিশ গঠন করেন এবং উভয়পক্ষকে কাগজাত নিয়ে সালিশে হাজির হওয়ার কথা জানান। সুরেশদের পক্ষে পাকিস্তান সেটেলমেন্ট জরিপি রেকর্ড থাকায় লাবন্য সরকার তার পক্ষে জরিপি রেকর্ড সম্পর্কিত কোন কাগজাত পেশ করতে না পেরে পাকিস্তার আমলের রেকর্ড ভূল বলে দাবি করে বসেন। দাবির স্বপক্ষে তিনি ব্রিটিশ আমলের ৯৫নং হেমু মৌজার কেস্টেল জরিপি পাট্টার একখানা জাবেদা নকল কপি পেশ করেন। এতে দেখা যায় সুরেন্দ্ররা কেস্টেল জরিপি মালিকদের উত্তরসূরী নন। অপরদিকে সুরেন্দ্ররা দাবি করেন যে তাদের পূর্বপুরুষ ছিলেন ছিরি চংগ এবং ছিরি চংগের পুত্র সুবল চংগের উত্তরসূরী সুনারাম, তরণী, রজণী ও নদীয়ারা পাকিস্তান জরিপি রেকর্র্ডীয় মালিক । সুরেন্দ্ররা ওই রেকর্ডীয় মালিকদের উত্তরাধিকারী। তারাও তাদের স্বপক্ষে কেস্টেল জরিপি পাট্টার একখানা জাবেদা নকল দাখিল করেন। জাবেদা নকলে দেখা গেছে সুবল চংগের পিতা ছিলেন ছিরি চংগ। কিন্তু পরবর্তীতে লাবণ্য সরকারের নেয়া একই পাট্টার জাবেদা নকলে দেখা যায় সুবল চংগের পিতার নাম ছিরি চংগ নয়। তার পিতার নাম ছিল ‘দীনেশ’। একই পাট্টার জাবেদা নকলে একজনের পিতার নাম দুই রকম দেখে স্থানীয়রা বিস্মিত হন। তারা সিলেট প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক এম এ হান্নান ও সাংবাদিক জেড এম শামসুলকে নিয়ে মঙ্গলবার (২ফেব্র“য়ারী) শরনাপন্ন হন রেকর্ডরুমের। রেকর্ড রুম কর্তপক্ষ তাদেরকে ভলিয়মে সুবল চংগের পিতা ছিরি চংগ বলে দেখান। এর মাত্র চারদিনের ব্যবধানে রেকর্ডরুম-এর কর্তা-ব্যক্তিরা ডিজিটাল টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে ঘসামাজা করে ছিরি চংগ এর পরিবর্তে দীনেশ নাম লিখে দেন। ছিরি চংগ ও দিনেশ এ দু’ নামের জাবেদা পর্চা সিলেট রেকর্ডরুম কর্তপক্ষই দিয়েছেন। তাদের দেয়া একই পাট্টার এক জাবেদা নকলে একজনের পিতা ছিরিচংগ আবার অন্য নকলে একই ব্যক্তির পিতা দীনেশ হওয়ায় সাংবাদিকসহ ভোক্তভোগীরা সোমবার সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. সফি উল্লাহ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)-কে বিষয়টি অবহিত করেন। তাদের অনুসন্ধানেও কেস্টেল জরিপি ভলিয়মে টেম্পারিং ও জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক নামে পরপর দুটি জাবেদা নকল সরবরাহের তথ্য প্রকাশ পায়। এসময় তারা সংশ্লিষ্টদের ডেকে ভৎর্সনা করেন এবং ভোক্তভাগীদের আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেন। রেকর্ডরুমের এহেন জালিয়াতি ও টেম্পারিংয়ের শিকার সুরেন্দ্ররা প্রায় ২০লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এবং এ জালিয়াতির কারনে শতাব্ধিরও উর্ধকাল ধরে তাদের মৌরসী ভিটেমাটি অন্যদের জবরদখলে চলে যাওয়ার আশংকা করছেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ তার সালিশে একই পাট্টায় রেকর্ডরুমের দু’ নামের জাবেদা নকল সরবরাহের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এব্যাপারে সিলেট জেলা রেকর্ডরুমের নকল নবিশ আব্দুল গনির সাথে যোগাযোগ করা হলে ওই পাট্টার জাবেদা নকল প্রদানে ভ্রম হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।
পাঠকের মতামত: