ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

লামায় মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বসতঘর ভস্মীভূত

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের মিছিল থামছে না। যেন মৃত্যুসঙ্গী বোমা ঘরে নিয়ে বসবাস। প্রতিদিনই খবরের কাগজ কিংবা টেলিভিশন খুললেই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ছবি ও সংবাদ দেখা যায়। ইদানীং বিস্ফোরণের সংখ্যাটা একটু বেশিই চোখে পড়ছে। প্রতিনিয়ত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ মারা গেছেন। দেশের বহুল ব্যবহৃত এই জ্বালানি তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) বা বোতলজাত গ্যাস সিলিন্ডার এখন আতঙ্কের আরেক নাম।

সোমবার (৮ জানুয়ারী) সন্ধ্যা ৬টায় বান্দরবানের লামা বাজারের মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মো. লোকমান সওদাগর এর বসতঘরের আগুন লেগে রান্নাঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। আশপাশের মানুষ দ্রুত এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করলেও ঘরটি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। লামা ফায়ার সার্ভিস ও লামা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

বাড়ির মালিক মো. লোকমান সওদাগর বলেন, আমি বিকেলে লামা বাজারের হাইস্কুল রোডের মো. জাকির হোসেনের দোকান থেকে একটি এল.পি গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় করি। মোবাইলে ফোন করলে তারা সিলিন্ডারটি আমার বাড়িতে দিয়ে যায়। সিলিন্ডারটি অত্যান্ত পুরাতন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। সিলিন্ডারটি রান্নাঘরে সংযুক্ত করে চুলায় আগুন দেয়া মাত্র ধপ করে চারদিকে আগুন ধরে যায়। জান নিয়ে আমি ঘর থেকে বেড়িয়ে যাই। এসময় আমার মাথার চুল পুড়ে যায় এবং রান্নাঘরটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। আমার সন্তান ও স্ত্রী দূরে থাকায় তাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমার স্ত্রী জানায় সিলিন্ডারটি আনার পর থেকে শু শু শব্দ করে গ্যাস বের হচ্ছিল। দোকানদারকে সিলিন্ডারটি পরিবর্তন করে দিতে বললেও তারা করে দেয়নি।

মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিষয়ে দোকান মালিক মো. জাকির হোসেন বলেন, আমার লাইসেন্স নেই। এল.পি গ্যাস বিক্রয় ও মজুদের আবেদন করেছি। সিলিন্ডার গুলো মেয়াদোত্তীর্ণ কিনা খেয়াল করিনি। উক্ত দোকান হতে গ্যাস ক্রয় করা আরো অনেকে বলেন, জাকির হোসেনের দোকানের অধিকাংশ সিলিন্ডার দুই নম্বর এবং মেয়াদোত্তীর্ণ। তাছাড়া সে মুদি মালের দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করে বিক্রয় করছে। যে কোন সময় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকা রযেছে।

লামা বাজারে ডজন খানেক দোকানে বিনা লাইসেন্সে এল.পি গ্যাস বিক্রয় করা হলেও স্থানীয় প্রশাসনের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছেনা। অবৈধ গ্যাস বিক্রেতাদের আইনের আওতায় এনে সাধারণ মানুষের জানমালের হেফাজত করতে প্রশাসনের আন্তরিক সহায়তা কামনা করেন এলাকাবাসি।

সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনা সম্পর্কে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, খবর পাওয়া মাত্র আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রেরণ করেছি। ক্ষতিগ্রস্থরা অভিযোগ করলে অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গ্যাস সিলিন্ডার আইন ১৯৯১ মতে একটি গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ ৫ বছর। তাছাড়া সিলিন্ডারের মান যাচাইয়ের জন্য প্রতি ৫ বছর পর সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (আইএসও) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, প্রতি ৫ বছর পর গ্যাস সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোনো পুনঃপরীক্ষা ছাড়াই দেশের বাজারে ২৫ বছরের পুরনো সিলিন্ডারও ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বাড়ছে।

পাঠকের মতামত: