খালেদ হোসেন টাপু, রামু ::
কক্সবাজারের রামুতে কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে ভয়াবহ বন্যার রূপ নিয়েছে। বন্যা আর পাহাড় ধসে ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পাহাড় ধসের ঘটনায় ১ জন গুরুতর আহত হয়েছে। সে বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বর্তমানে বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার ( ২৫জুলাই) সকাল থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে আনুমানিক অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে।
বাঁকখালী নদীর পানি এবং পাহাড়ী ঢলে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু মরিচ্যা পুরাতন আরকান সড়ক,কক্সবাজার টেকনাফ সড়ক, শাহসুজা সড়কসহ বিভিন্ন গ্রামিণ সড়ক গুলো তলিয়ে গেছে। এসব সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এছাড়া রামুর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র ফকিরা বাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত হাঠ-বাজার গুলোও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
বুধবার (২৫শে জুলাই) ভোরে রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মরিচ্যা ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে স্থানীয় জাকের হোসেনের ছেলে মোর্শেদ আলম (৫) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং জাকের হোসেনের বড় ছেলে খোরশেদ (৯) আহত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় জাকের হোসেনের বসত বাড়িটিও মাটি চাপায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
এদিকে লম্বরী পাড়া খন্দকার পাড়া ঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদীতে পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে ভেসে আসা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে রামু থানা পুলিশ। তবে তার এখনো পরিচয় পাওয়া যায়নি।
খবর পেয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ লুৎফুর রহমান জাকের হোসেনের বাড়িতে নিহত শিশুটিকে দেখতে যান। এসময় ইউএনও নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ লুৎফুর রহমান পাহাড় ধসের ১ শিশুর মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করে জানান, বুধবার ভোর ৪টার দিকে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মরিচ্যা ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে ঘরের মাটি চাপা পড়ে মোর্শেদ নামে ৫ বছর বয়সি এক শিশুর মৃত্যু হয় এবং আহত হয় তার বড়ভাই খোরশেদ। খবর পেয়ে সকাল ৯টার দিকে পাহাড়ধস ঘটনাস্থল ও সদর হাসপাতালে পৌঁছান তিনি। এরপর তৎক্ষনিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় ধসে নিহত পরিবারকে নগদ অর্থ প্রদান করেন। তিনি আরো জানান, টানা প্রবল বর্ষণে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে আনুমানিক অর্ধ লক্ষ মানুষ পানি বন্দি রয়েছে এবং বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়ায় সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে পাহাড়ে এবং পানিবন্দি মানুষগুলোকে গৃহপালিত পশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সকল অশ্রয় কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি দূর্যোগ মোকাবেলায় জরুরী মিটিং করা হয়েছে।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম মিজানুর রহমান অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের বিষয় নিশ্চিত করে জানান, প্রবল বর্ষনে বাঁকখালী নদীতে পাহাড়ি ঢলের ¯্রােতে ভেসে এসে লম্বরী পাড়াস্থ খন্দকার পাড়া নদীর তীর এলাকায় আটকে পড়া উক্ত অজ্ঞাতনামা লাশটি দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন।
রামুর তেমুহনী এলাকায় দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপকারী (ওয়াটার রিডার) রুহুল আমিন রোহেল জানান বুধবার সকাল থেকে বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
গর্জনিয়া চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, টানা বর্ষণে বন্যার পানি তার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত করেছে। উজানি ঢলে বাঁকখালী নদীতে ব্রিজের এপ্রোচ সড়ক তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাঠকের মতামত: