আনন্দবাজার :: ভারতের মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের মহা-নাটকে যে পরিণতি ঘটল, তাতে গেরুয়া শিবির ভাল মতোই ধাক্কা খেয়েছে। বিপর্যস্ত হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর রাতারাতি ‘চাণক্য’ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াও।
‘এলেন, দেখলেন জয় করলেন’, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থেকে ৭ নম্বর লোক কল্যাণ মার্গের বাসিন্দা হয়ে ওঠা নরেন্দ্র মোদীর যাত্রাকে অনেকেই এ ভাবে বর্ণনা করেন। বিশেষত, সমস্ত হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়ে এ বছর বিপুল জনসমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর প্রধান সেনাপতি অমিত শাহের রাজনৈতিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দু’বার ভাবছিলেন অনেকেই। কিন্তু এক দিকে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মোদী-শাহ জুটি যখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে, ঠিক সেই সময়েই বিধানসভার নিরিখে গত দু’বছরে ক্রমশ পায়ের তলার জমি হারাতে শুরু করেছে বিজেপি, যাতে নয়া সংযোজন মহারাষ্ট্র। সেখানে প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে মাত্র ৮০ ঘণ্টাতেই রণে ভঙ্গ দিতে হয়েছে তাদের। আর তাতেই উদ্বেগ বেড়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।
২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যাগারিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গড়ে বিজেপি। সেই সময়ে একক ভাবে বা শরিক দলের সঙ্গে মিলে পঞ্জাব, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, গোয়া এবং অরুণাচলপ্রদেশ, এই সাতটি রাজ্য তাদের দখলে ছিল। মোদী ঝড়ে ভর করে তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫-তেই আরও ৬টি রাজ্য গেরুয়া শিবিরের দখলে চলে আসে। ২০১৬ সালে তাদের দখলে থাকা মোট রাজ্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫। ২০১৭-তে আরও চারটি রাজ্য যোগ হয় তাতে। ২০১৮-র সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট ২১টি রাজ্যের দখল চলে আসে গেরুয়া শিবিরে। সেইসময় শুধুমাত্র তামিলনাড়ু, কেরল, কর্নাটক, মিজোরাম, পঞ্জাব, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং তেলঙ্গানা তাদের হাতে ছিল না।
কিন্তু এর পরেই একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া তে শুরু করে বিজেপির। ২০১৮-য় পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়— হিন্দি বলয়ের এই প্রধান তিন রাজ্যই হাতছাড়া হয় তাদের। এর পর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে অন্ধ্রপ্রদেশও বেরিয়ে যায় হাত থেকে। তার মধ্যে নভেম্বরে মিজোরামে জোট সরকার গড়তে সফল হলেও, গত বছর ডিসেম্বরে মেহবুবা মুফতির পিডিপি-র সঙ্গে বিজেপির জোট সরকার ভেঙে গেলে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় সেখানে। তার জেরে উপত্যকাও হাতছাড়া হয় গেরুয়া শিবিরের।
লোকসভা নির্বাচনেই গেরুয়া ঝড়ের দাপটে উড়ে গিয়েছিল বিরোধীরা।
এ বছরের গোড়ায় কর্নাটকে এইচ ডি কুমারস্বামীর জনতা দল সেকুলার এবং কংগ্রেসের জোট সরকার ভেঙে বিএস ইয়েদুরাপ্পার নেতৃত্বে সেখানে সরকার গঠন করে বিজেপি। এর পরই মঙ্গলবার সঙ্ঘের গড় মহারাষ্ট্র হাতছাড়া হয় তাদের। শনিবার রাতারাতি রাষ্ট্রপতি শাসন উঠে যাওয়ার পরেই সেখানে সরকার গঠন করে বিজেপি। এনসিপি-র অজিত পওয়ারকে ভাঙিয়ে এনে দ্বিতীয় বারের জন্য দেবেন্দ্র ফডণবীসকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসায় তারা। কিন্তু গতকাল অজিত পওয়ার ইস্তফা দেওয়ার পর সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় পদত্যাগ করেন ফডণবীস নিজেও।
মহারাষ্ট্র হাতছাড়া হওয়ার পর এই মুহূর্তে বিজেপির দখলে থাকা মোট রাজ্যের সংখ্যা ১৭-য় এসে ঠেকেছে। তবে এর মধ্যে বড় রাজ্য বলতে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, হিমাচলপ্রদেশ, কর্নাটক এবং উত্তরাখণ্ডই রয়েছে। আর তাতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে গেরুয়া শিবিরের। একই সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে অমিত শাহর সদ্য গড়ে ওঠা ‘চাণক্য’ ইমেজও। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে ট্রল ও মিম চালাচালি। জার্সি বদলের রাজনীতিতে শাহ যে এখন ব্যাকফুটে, তা বেশ স্পষ্ট।
পাঠকের মতামত: