ডেস্ক নিউজ : মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যে অভিযানে নিহত মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়েছে। মাদকের চোরাচালান বন্ধ না হলেও অনেকটাই কমে এসেছে; কিন্তু এতকিছুর পরও বিলাসবহুল এসি বাসে ইয়াবা ট্যাবলেট চোরাচালান বেড়েছে। প্রায়ই ইয়াবাসহ আটক হচ্ছে এসব বিলাসবহুল বাস এবং তার চালক ও সহকারীরা।
এদিকে বিলাসবহুল বাসে ইয়াবার চোরাচালানরোধ না হওয়ায় এটি মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাইকমান্ডের কাছে। ইয়াবার সঙ্গে মামলার আলামত হিসেবে আটক হচ্ছে এসব বিলাসবহুল বাস। এতে সার্বিক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতেও। এ কারণে এ বিষয়ে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী বিলাসবহুল বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে এলিট ফোর্স র্যাব। বৈঠকে বাসের চালক- হেলপারদের ইয়াবা চোরাচালানে জড়ানো ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে।
অবশ্য মালিকপক্ষ বলছেন, তারা এ ইয়াবার চোরাচালান ঠেকানোর ক্ষেত্রে অনেকটাই নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। র্যাবের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে ২০ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয় বিভিন্ন বিলাসবহুল এসি বাস থেকে। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় ২১ জনকে। এদের বেশিরভাগই চালক ও হেলপার। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ১৫ লাখ দুই হাজার পিস ইয়াবাসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। জব্দ করা হয়েছে ১০টির বেশি বিলাসবহুল এসি বাস।
র্যাব-পুলিশ সূত্র জানায়, কক্সবাজারে নির্ধারিত বাস টার্মিনালে গাড়ি রাখেন না বেশিরভাগ চালক। তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাস রাখেন। এতে করে নজরদারি জটিল হয়ে পড়ে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাসে ইয়াবার চালান তুলে দেন মাদক ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় অভিনব কৌশল অবলম্বন করেন তারা। বাসের ইঞ্জিন এবং বিভিন্ন জায়গায় ভরে আনা হয় এসব ইয়াবার চালান। অনেক সময় বিলাসবহুল বাসে যাত্রী নিজের কাছেই রাখছেন ইয়াবা। ব্যবহার করা হচ্ছে চালক, সুপারভাইজার ও সহকারীদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কিছু সদস্যের সহায়তা পাচ্ছে এই চক্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, বেশিরভাগ সময় দেখা যায় চালক অথবা তার সহকারী জড়িত থাকেন ইয়াবা চোরাচালানে। বিলাসবহুল বাস ঘিরে একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে আমরা বাসমালিকদের সঙ্গে শীঘ্রই বৈঠকে বসব। ইয়াবা চোরাচালান বন্ধে সব পক্ষের করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে।
গত ৬ জুন কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বিলাসবহুল এসি বাস থেকে ৩৩ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার চরফরিদ পেট্রলপাম্পের সামনে থেকে র্যাব ৭-এর একটি দল বাসটি আটক করে। এ সময় বাসচালক শুক্কুর ও তার সহকারী ফরিদকে আটক করা হয়। সর্বশেষ ২০ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তুবা লাইন নামে একটি বিলাসবহুল এসি বাসে অভিযান চালায় র্যাব-১০। কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা বাসটি থেকে ৪৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। এর আগে হানিফ ও গ্রীন লাইন পরিবহনের বিলাসবহুল বাস থেকেও ইয়াবা জব্দ করে র্যাব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমরা নিজস্ব সোর্স নিয়োগ করেছি, বাস ছাড়ার আগে সেখানে কোন গোপন কথা বা কার্যক্রম চলে কিনা সেটি দেখতে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বলেছি, গাড়ি ছাড়ার আগে তল্লাশি করলে ভালো হয়। তারপরও ইয়াবার চালান ঠেকাতে না পেরে অনেকটাই নিরুপায় হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত: