ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাড়ির আঙিনায় তামাকচুল্লি

tamakহাফিজুল ইসলাম চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি:
ফসলি জমি ও সংরক্ষিত বন তো আছেই, বাদ পড়েনি বাড়ির আঙিনাও। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় নিয়মনীতি না মেনে গড়ে উঠেছে অসংখ্য তামাকচুল্লি। কেবল বসতবাড়ির আঙিনায় হাজারো তামাকচুল্লি স্থাপন করা হয়েছে। চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়া জনস্বাস্থের জন্য হুমকি তৈরি করেছে। পাশাপাশি বসতবাড়িতেও বাড়ছে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি।

তামাক চাষিরা জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তামাকপাতা পোড়ানোর জন্য খেতের পাশে কিংবা ঘরবাড়ির আঙিনায় তৈরি করা হয়েছে অন্ত সাড়ে চার হাজার চুল্লি।

সরেজমিনে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির একাধিক গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির আঙিনায় স্থাপন করা হয়েছে তামাকচুল্লি। তামাকের মৌসুম শুরু হওয়ায় চুল্লিগুলোতে বনের কাঠ ব্যবহারের মাধ্যমে এখন ২৪ ঘণ্টাই তামাক পুড়ছে। চুল্লির ধোঁয়া ঢুকছে আশপাশের বসতবাড়িতে।

এসব এলাকার অনেক বাসিন্দা জানান, বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। তামাকের কটু গন্ধে ঘরে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে অনেকের পক্ষে। তা ছাড়া চুল্লি থেকে যেকোনো সময় বসতবাড়িতে আগুন লাগার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

তামাক চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তামাকচুল্লি­গুলোতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এর অধিকাংশই কাঠ আসছে সংরক্ষিত বন থেকে। প্রতিটি চুল্লিতে গড়ে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন।

রামুর গর্জনিয়ার পূর্ব বোমাংখিল গ্রামের বাসিন্দা ও গ্রামীন ব্যাংক কর্মকর্তা অমর শর্মা বলেন, তামাকচুল্লির কারণে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। সংরক্ষিত বন ও সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করা হচ্ছে। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। জমি সংকুলান না হওয়ায় এ বছর বেশির ভাগ এলাকায় বাড়ির আঙিনায় তামাকচুল্লি স্থাপন করা হয়েছে। যা আরও বিপদজনক।

নাইক্ষ্যংছড়ির উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার তামাক চাষে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। সে জন্য আমরা চাষিদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’

নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারি কমউিনিটি মেডিকেল অফিসার ডা.রনজন চৌধুরী বলেন, তামাক চাষ ও বাড়ির আঙিনায় তামাক পোড়ানোর কারণে আলসার, ক্যানসার, হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তামাক চাষ করে চাষিরা যে টাকা আয় করছেন, স্বাস্থ্যহানির বিপরীতে তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা চিকিৎসা বাবদ খরচ করতে হচ্ছে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বা পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে তামাকচুল্লি স্থাপনের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে তামাকচুল্লি স্থাপনের ক্ষেত্রে কোনো সুস্পষ্ট বিধিবিধান নেই। তবে তামাক পোড়ালে যেহেতু বায়ুদূষণ হয়, সে কারণে এসব চুল্লির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বায়ুদূষণ কতটুকু মাত্রায় হচ্ছে তা বের করতে হবে। তিনি জানান, আগামীতে ইটভাটার মতো তামাকচুল্লি তৈরির ক্ষেত্রেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার প্রক্রিয়া চলছে।

 

পাঠকের মতামত: