ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বান্দরবানে সড়ক বিভাগের ২১ কোটি টাকার কাজে হরিলুট

Bandarban-pic-3 বান্দরবান প্রতিনিধি :::
পর্যটনের শহর বান্দরবান। সারা বছরই পর্যটকে ভরপুর। জেলা শহরে আসার একমাত্র পথ কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক। এই সড়কের কাজেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নি¤œমানের পাথর, বালি, বিটুমিন ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের ২২.৬৪ কিলোমিটার কাজটি ২১ কোটি টাকা বরাদ্ধ ধরা হয়েছে। ওভারলের কাজে এমন অনিয়ম হওয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে পর্যটকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও সড়ক ও জনপদ অনিয়মের বিষয়ে অস্বীকার করেছেন।

গত মার্চে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৭.১৪ কিলোমিটার ওভারলের কাজ উদ্বোধন করা হয়। দীর্ঘদিন পর ওভারলের কাজ শুরু হওয়ায় খুশি হয় বান্দরবানের সাধারণ মানুষ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম এডিশন্যাল বুরে‌্যা অফিস থেকে টেন্ডার এর মাধ্যমে কাজটি পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাব-আরসি প্রাইভেট লিমিটেড। ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে বান্দরবান- কেরানীহাট ৩৭.১৪ কি:মি কাজের বার আউলিয়া- টংকাবতী ১৪.৫ কিলোমিটার ও বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের ২২.৬৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বর্তমানে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের ২২.৬৪ কিলোমিটার এর কাজ চলছে।

এরই মধ্যে কাজে নি¤œমানের পাথর, বিটুমিন ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন এলাকা সচেতন জনগণ। ২০ এমএম ডাউন, ১৩এমএম, ১২এমএম, ৫-১০, ডাষ্ট ও বালি মিশানোর কথা থাকলেও নিয়মমত না মেশানোর ফলে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে থেকে যাচ্ছে ফাঁক । সিলেটের পাথর ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় বোল্ডার পাথর। এছাড়া ৬৫ এমএম লুজ আর চাপ দেওয়ার পর রাস্তা ৫০ এমএম (২ইঞ্চি) পুরু হবার করার কথা থাকলেও অধিকাংশ জায়গায় তার অর্ধেকও দেয়া হচ্ছেনা। আর সরকারি কাগজপত্র অনুযায়ী ৬০-৭০গ্রেড এর বিটুমিন ব্যবহার করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৮০/১০০ গ্রেড এর বিটুমিন ওভারলে কাজে ব্যবহার করছেন। এ বিটুমিন গাড়ী যোগে চট্টগ্রামের মাদারবাড়ীর বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাহাঙ্গীর আলম এন্ড কোম্পানী থেকে আনা হচ্ছে।

রেইছার এলাকার বাসিন্দার মো: আবুল কাশেম জানান, তাদের এলাকায় কাজ করার পরের দিনই অনেক জায়গায় পাথর উঠে যেতে শুরু করেছে। এছাড়া পাতলা লেভেল দিয়ে চলে যাচ্ছে তারা। এ ব্যাপারে তাদের সাথে ঠিকাদার ও সওজ এর কর্মকর্তাদের সাথে কাজের মান নিয়ে তর্কাতর্কি হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি জানান, তারা যেভাবে কাজ করছে তাতে কয়েক কোটি টাকার বেশি খরচ হবার কথা না। সব টাকাই লুটপাট হবে। রাস্তাটি ৫০ এমএম পুরু করার কথা থাকলেও রেইচা লম্বা রাস্তা, রেইছা নামন্তি, কেওচিয়া, আমতলী, লাল ব্রিজসহ যেখানে লোকজন কম সেখানে যেনতেন ভাবে লেপ দিয়ে চলে যাচ্ছে। ২৫ এমএমও দিচ্ছেনা অনেক জায়গায়। এসব এলাকায় পাথরের মানও তেমন ভালো নয়, ফিনিশিংও ভাল হচ্ছেনা। প্রায় প্রতি এলাকায় গর্ত থেকে যাচ্ছে।

মেঘলা স্থানীয় বাসিন্দার বাদশা বলেন, শুধু মাত্র বান্দরবানের মেঘলা এর সামনে সুন্দর ভাবে কাজ করা হয়েছে। বুয়েট ও চুয়েটে পরীক্ষার জন্য ওই এলাকা থেকে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে। আর অন্য কোথাও থেকে তারা নমুনা পাঠায়নি।

কেরানী হাটের বাসিন্দার মো: নাজিম উদ্দিন বলেন, এখানে যেভাবে কাজ করে তারা চলে যাচ্ছে তাতে রাস্তাটি এক বছরও টিকবে কিনা সন্দেহ আছে। বিটুমিনগুলো দেখে ভাল মনে হচ্ছেনা। আর পাথরগুলো ভালো-খারাপ মিশানো রয়েছে। রাস্তায় ফাঁক থাকায় বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাবে। শীগ্রই এ রাস্তাটি পরিদর্শনের জন্য তিনি যোগাযোগ মন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান।

বিটুমিন পরিবহনকারী গাড়ীর চালকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, চট্টগ্রামের মাদারবাড়ীর জাহাঙ্গীর আলম এন্ড কোম্পানী থেকে বিটুমিন গুলো আনা হচ্ছে।

এব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাব-আরসি প্রাইভেট লিমিটেড এর পিএম আনোয়ার হাজারী বলেন, আমরা সব পাথরই সিলেট থেকে আনছি। এছাড়া বিটুমিন গুলো পদ্মার ইষ্টার্ণ রিফাইনারী থেকে আনা হচ্ছে। তবে ৬০/৭০ গ্রেড ব্যবহার না করে ৮০/১০০ গেড বিটুমিন ব্যবহার করছি।

বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তোফায়েল মিয়া অনিয়ম ও দুনীতি কথা অস্বীকার করে বলেন, ওভারলে কাজটি যেন স্থিতি অনুসারে শেষ করা যায় সে ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ ও আমি সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর মাধ্যমে কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। কাজে আমরা কোন গরমিল পাইনি।

পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বলেন, সারা বাংলাদেশেতো অনেক রাস্তার কাজ হচ্ছে, কোথাও কখনো দেখেছেন পাথর ও বিটুমিন নিয়ে নিউজ করতে! আপনি কি ধরনের নিউজ করেন! আপনারতো খুশি হওয়া উচিত বান্দরবানে ওভারলের কাজ হচ্ছে। বান্দরবানের রাস্তায় কখনো মেশিনে কাজ করতে দেখেছেন! এখানে মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আর মেশিনে কাজ করলেতো একটু কমবেশি হতেই পারে। এখানে তো আমাদের কিছু করার নাই। তবে যাই হোক এত ভাল কাজ বান্দরবানে আর হয়নি।

 

পাঠকের মতামত: