নিউজ ডেস্ক :::
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, হজ করতে সৌদি আরবে যাওয়ার জন্যে প্রায় ৭০ হাজার হজযাত্রী এখনও ভিসাই পান নি। ফলে তাদের হজ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
হজযাত্রীদের নিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল এরকম আরও তিনটি ফ্লাইট আজ বাতিল করা হয়েছে।
এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশের মোট ২০টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হলো।
এই তুমুল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্য হজ এজেন্সিগুলো দুষছে সৌদি কর্তৃপক্ষকে।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, সৌদি আরবে যে নতুন ইলেকট্রনিক বা ই-ভিসা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, তার ফলেই এই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রার জন্য নিবন্ধিতদের মধ্যে য় অর্ধেক যাত্রী এখনো ভিসাই হাতে পাননি।
বারবার ফ্লাইট বাতিল বা শূন্য আসন নিয়ে ফ্লাইট যাবার ফলে লোকসান গুনছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান। কিন্তু হজ এজেন্সিগুলো এই সমস্যার দায় নিতে রাজী নয়। কোন ব্যাখ্যা দিচ্ছে না ধর্ম মন্ত্রণালয়ও।
ঢাকার আশকোনায় হজ ক্যাম্প থেকে দিনে কয়েকবার ‘লাব্বায়েক’ ধ্বনি দিতে দিতে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন হজযাত্রীদের একেকটি দল।
তবে অনেকের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না।
কারণ গত কয়েক দিনেই অসংখ্য হজযাত্রী ভিসা না পেয়ে এখনো যেতে পারেন নি বা বিলম্বে যাত্রা করছেন।
এর সাথে যোগ হয়েছে যারা গত দু’বছরে হজ করেছেন তাদের ওপর সৌদি সরকারের অতিরিক্ত ২০০০ রিয়াল কর আরোপ।
পাবনা থেকে আসা শেখ নাজমুল হুদা গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবত অবস্থান করছেন হজ ক্যাম্পে।
২০১৫ সালে একবার হজ করে আসা মি. হুদা এজেন্সিকে অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়াল দিয়েছেন দু’বার। কিন্তু ভিসা এখনো পাননি।
“বলেছে টাকা কোথাও আটকে গেছে, আবার দেন। পরে ফেরত পাওয়া যাবে,” বলেন তিনি।
অথচ এই অব্যবস্থাপনা এবং যাত্রীদের এই দুর্ভোগের কোন দায় নিতে নারাজ হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাব।
সংগঠনটির মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম এর পুরো দায়টি চাপাচ্ছেন সৌদি আরবের ওপর।
তাদের দাবী, সেখান থেকে ভিসা সময়মত না আসায় এবং দেরিতে তাদের কর আরোপের কারণে এই জটিলতা হচ্ছে।
“অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়াল এবং ভিসা প্রিন্টিংয়ের সমস্যা থাকবেই। এই দুর্ভোগ যাত্রীর, দুর্ভোগ হজ্জ এজেন্সিগুলিরও,” বলেন মি. তসলিম।
প্রতি বছরের ঘটনা হিসেবে হজ ফ্লাইট বাতিলকে হাব স্বাভাবিকভাবে দেখলেও, প্রতি বছর এমন দুর্ভোগ কেন হবে তার কোন সদুত্তর নেই হাবের কাছে।
যদিও হজযাত্রীদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন ‘হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদ’এর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল নাসেরের অভিযোগ, এজেন্সিগুলোও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সঙ্কট তৈরি করছে।
তার দাবী, ছয় শতাধিক হজ এজেন্সির মধ্যে মাত্র শ’খানেক এজেন্সিকে বাংলাদেশ বিমান টিকেট দিয়েছে। তার মধ্যে আবার ৩০টি এজেন্সির সিন্ডিকেট সবচেয়ে বেশি টিকেট পেয়েছে, যারা পরবর্তীতে অতিরিক্ত দামে ছোট এজেন্সিগুলোর কাছে সেগুলো বিক্রি করছে।
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করছে হাব। তারা বলছে, টিকেট দেয়াটা বিমানের বিষয়, সেটি নিয়ে তারাই বলতে পারবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলছেন, এধরনের কোন সিন্ডিকেটের বিষয়ে তার জানা নেই।
এবছর ১ লাখ ২৮ হাজার হজযাত্রীর মধ্যে এখনও পর্যন্ত ভিসা পেয়েছেন ৬০ হাজারের মতো।
অথচ সৌদি সরকারের হজের জন্য ই-ভিসা চালুর পর বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দেশে এমন সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়নি।
বাংলাদেশে হজযাত্রার সার্বিক দায়িত্বে থাকে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে বক্তব্যের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোন বক্তব্য দেননি।
যদিও বাংলাদেশ বিমান এবং হাব বলছে, তারা গত বছরের মত সব হজযাত্রীকেই শেষপর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবেন।
তবে এবছর এত স্বল্প সময়ের মধ্যেই এত বেশি ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে যাত্রীদের মধ্যে।
প্রতিবছর হজ করতে গিয়ে কেন এই দুর্ভোগ সেই প্রশ্নেরও কোন উত্তর নেই।
– বিবিসি বাংলা
পাঠকের মতামত: