ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিশেষ প্রতিবেদন
বাংলা ট্রিবিউন :
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দাবি করেছে, বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিয়েই শনিবার রাখাইনের বেসামরিক হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ জানিয়েছে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূত্রের বরাত দিয়ে তারা দাবি করেছে, বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুয়াজ্জেম আলী এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করের মধ্যকার ৪০ মিনিটব্যাপী এক বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি। সাম্প্রতিক সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাখাইন পরিস্থিতিকে মিয়ানমারের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই আখ্যা দিয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। তবে রবিবারের বিবৃতিতে সরাসরি রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রসঙ্গ না তুললেও বেসামরিক হত্যাকাণ্ড এড়ানোর প্রতি মিয়ানমারকে নজর দিতে বলা হয়। তাগিদ দেওয়া হয়, শান্তিপূর্ণ পথে সংকট মোকাবেলার।
মিয়ানমার সফরকালে অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যখন দেশটি একটি শান্তি প্র্রক্রিয়ায় আসছে অথবা সমস্যা সমাধানের পথে আছে, তখন আমরা চাই মিয়ানমারের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের জন্য সব পক্ষ একসঙ্গে কাজ করবে।’ সে সময় রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলমান জাতিগত নিধনযজ্ঞের ব্যাপারে কোনও অবস্থান নেননি মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়েও কোনো আহ্বান রাখেননি মোদি। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সঙ্গে যুথবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
শনিবার জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে কক্সবাজার ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। তাদের আশ্রয়ের জন্য নতুন বসতি স্থাপনের কাজ চললেও নূন্যতম মানবিক সেবা অপ্রতুল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর অনুযায়ী বিপুল পরিমাণ শরণার্থীর ঢলকে কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমার সরকারের ওপর ভারতেক চাপ সৃষ্টি করতে বলে। আর বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিয়েই ভারত নতুন বিবৃতি দেয়। রবিবারের বিবৃতিতে মিয়ানমারকে কঠোর কোনও বার্তা না দিলেও ভারত ঠিক আগের অবস্থানে নেই। এদিনের বিবৃতিতে মিয়ানমারকে ধৈর্য্য ও দক্ষতার সঙ্গে বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতি এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে শনিবার ঢাকার পক্ষ থেকে নয়া দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের একটি শীর্ষ স্থানীয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, বর্তমান সঙ্কট নিয়ে ভারত সরকারের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। অর্থনৈতিকভাবে তাদের ভার বহন বিরাট এক কষ্টের বিষয়। তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই বাংলাদেশের। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুয়াজ্জেম আলী ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করকে বলেছেন, এ অবস্থায় বাংলাদেশ ভয়াবহ এক ধকলের মুখে আছে। তাদের মধ্যে বৈঠক স্থায়ী হয় ৪০ মিনিট। এ সময় মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে শরণার্থীর ঢল থামাতে আহ্বান জানানো হয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ভাষ্য মতে, ওই আহ্বানে সাড়া দিয়েই মিয়ানমার সংক্রান্ত নতুন বিবৃতি দিয়েছে ভারত।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয় শনিবার এই প্রতিক্রিয়া জানায়।
হিন্দুস্থান টাইমসের খবরেও নতুন বিবৃতির পেছনে বাংলাদেশের ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেন। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের স্রোত বাংলাদেশকে কী দুঃসহ পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়েছে, হাইকমিশনার তা জয়শঙ্করকে জানান। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ভারতকে পাশে চায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাখাইন পরিস্থিতি সংক্রান্ত রবিবারের বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনে যা ঘটছে তা নিয়ে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সংযতভাবে এবং পরিপক্বতার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বেসামরিক লোকজনের কল্যাণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে রাখাইনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আহ্বান জানাই। রাজ্যটিতে সহিংসতা বন্ধ করে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।’
রাতে এই বিবৃতি টুইট করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার।
পাঠকের মতামত: