নিউজস্ব প্রতিবেদক ::
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় ‘বন খেকো’ খ্যাত চাকরিচ্যুত প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গনিকে হাইকোটের দেয়া ১২ বছরের কারাদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগের বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে আজ ওসমান গণির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এ এম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশিদ আলম খান।
এর আগে ওসমান গণিকে দেয়া বিচারিক আদালতের ১২ বছরের সাজা বহাল রেখে ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করলে আজ আাপিল বিভাগও সেই রায় বহাল রাখেন।
পরে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, আসামি ওসমান গণির করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে বিশেষ আদালতের দেয়া রায় বহাল রইলো আপিল বিভাগেও।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ৫ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ওসমান গণিকে দোষী সাব্যস্ত করে ১২ বছর ও তার স্ত্রী মোহসিনারা গনিকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত ওসমান গনির নামে থাকা এক কোটি ৮০ লাখ ও স্ত্রীর নামে থাকা দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ২৭০ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করেন।
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে এবং আজ আপিল বিভাগেও তার সাজা বহাল রাখেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওসমান গনির উত্তরার সরকারি বাসভবনে অভিযান চালিয়ে চালের ড্রাম, বালিশ ও তোশকের ভেতর থেকে এক কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করে। তারা ৪১ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্রের সন্ধানও পায়। এরপরই ওসমান গনিকে গ্রেফতার করা হয়। বাসা থেকে ওসমান গনির নামে দুটি পাসপোর্ট পাওয়া যায়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একটি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার লকার থেকে ২৯০ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ২০ ভরি অলংকারের বৈধ কাগজপত্র ছিল।
দুদক ২০০৭ সালের ১৬ জুন ওসমান গনিকে তার সম্পত্তির হিসাব জমা দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়। ওসমান গনি ২৬ জুলাই তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব জমা দেন। বিবরণীতে তিনি স্ত্রী মোহসিনারা ও তার নামে তিন কোটি ৭০ লাখ ১৫ হাজার টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ ২৯০ ভরি স্বর্ণালংকার আছে বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৬ টাকার এফডিআরসহ (স্থায়ী আমানত) মোট এক কোটি ৫৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৯১ টাকা জমা ছিল। বাসায় আসবাবপত্র দেখানো হয়েছে চার লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মূল্য দেখানো হয় সাত লাখ পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে দেখিয়েছেন জিগাতলা মনেশ্বর রোডের ৯৬/২/বি নম্বরে একটি পাঁচতলা বাড়ি। দুদকের মূল্যায়নে ওই বাড়িটির মূল্য এক কোটি এক লাখ ৬৭ হাজার ৭৯৩ টাকা। চার কাঠা পরিমাণের এই জমির ক্রয়মূল্য ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের সাত নম্বর সড়কে পাঁচ কাঠা জমির একটি প্লট; নিজের নামে পূর্বাচল ২ নম্বর সেক্টরের ১০২ নম্বর সড়কে সাড়ে সাত কাঠার ১২৯ নম্বর প্লট, যার মূল্য ১৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা; বরিশালের আলেকান্দায় ছয় শতাংশ জমি, মূল্য তিন লাখ টাকা দেখানো হয়; বিবরণীতে বলা হয়, তিনি ও তার স্ত্রী ১৯ লাখ ৩০ হাজার ৫২৭ টাকার সম্পদের আয়কর দিয়েছেন।
দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, ওসমান গনি এক কোটি দুই লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। তার জ্ঞাত আয়বহিভূর্ত সম্পদের পরিমাণ চার কোটি ৯৬ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৪ টাকা।
২০০৭ সালের ২৬ জুলাই দুদক ওসমান গনি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে উত্তরা থানায় মামলা করে। দুদকের সহকারী পরিচালক আখতার হামিদ ভূঁইয়া ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত ৫১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। এরপর ২০০৮ সালের ৫ জুন আদালত ওসমান গনিকে ১২ বছরের সাজা দিয়ে রায় দেন।
পাঠকের মতামত: