মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয় :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা মাঝিরপাড়া শাহ রশিদিয়া আলিম মাদ্রাসার ৮পদে নিয়োগ পরীক্ষা গতকাল ১৫ জুলাই সকাল ১০ ঘটিকার সময় নেওয়ার জন্য কিছুদিন পূর্বে ডাকযোগে প্রার্থীদের ঠিকানায় অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়। প্রবেশপত্রে উল্লেখিত সময় বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা মাদ্রাসায় উপস্থিত হলেও সকাল ১০ঘটিকার সময় পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। পরীক্ষার্থীরা দুপুর ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এই ফাকে অনেক পরীক্ষার্থী যার বাড়িতে চলে যায়। সকাল থেকেই নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুর উধাও হয়ে যায়। পরে দিনভর অনেক নাটকীয়তার শেষে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুর দুপুর ২ টার দিকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির প্রতিনিধি মাহফুজা ইয়াছমিনকে নিয়ে প্রাইভেট কার যোগে মাদ্রাসায় পৌছান। এরপর বেশ তড়িগড়ি করেই বিকাল ৩ টার দিকে যে সব পরীক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন শুধুমাত্র তাদের কাছ থেকেই বেশ তড়িগড়ি করেই লিখিত পরীক্ষা নেন। এরপর লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ না করেই লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সবার কাছ থেকেই বিকালে মৌখিক পরীক্ষা নেন ডিজির প্রতিনিধি মাহফুজা ইয়াছমিন ও নিয়োগ কমিটি! এ দিন বিকালে মৌখিক পরীক্ষা নিলেও ১৬ জুলাই বিকাল পর্যন্ত উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের রেজাল্ট প্রকাশ করেনি নিয়োগে কমিটির সদস্য সচিব ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুর।
মো: ইউনুচ ও মো: ইউসুফসহ আরো কয়েকজন পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, তারা এ ধরনের অনিয়ম-দূর্নীতির নিয়োগ পরীক্ষা আর কোথাও দেখেননি। সকাল ১০ টার পরীক্ষায় নেওয়ার জন্য প্রবেশ পত্রে উল্লেখ ছিল। বিভিন্ন পদে অনেক মেধাবী পরীক্ষার্থী যথাসময়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে মাদ্রাসায় উপস্থিত হন। কিন্তু নিয়োগ কমিটির চলচাতুরীর কারণে দুপুর ২ টা পর্যন্ত কোন পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। দুপুর আড়াইটার দিকে হঠাৎ করেই যে সব পরীক্ষার্থী উপস্থিত ছিলে তাদের কাছ থেকে পরীক্ষা নিয়েছে। পরীক্ষার্থীরা আরো জানায়, নিয়োগ কমিটির পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে অধ্যক্ষ ও নিয়োগ কমিটি নানা টালবাহানা করেছে। তার এ ধরনের হটকারী ও প্রতারণামূলক নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল চেয়ে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন্।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মগনামা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে সংবাদপত্রে বিভ্রান্তিকর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের মোটা অংকের বিনিময়ে নিয়োগের জন্য অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় উক্ত মাদ্রাসার নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের বস্তুনিষ্ট ও তথ্যনির্ভর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে গতকাল ১৫ জুলাই শুক্রবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় প্রার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষা না নিয়ে মাদ্রাসা মিলনায়তনে বিকালে একটি ফাতানো নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এদিকে উক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ’র পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য মোটা অংকের লেনদেনও হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ১৫ জুলাই বিকালে তড়িগড়ি করে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করলেও ১৬ জুলাই বিকাল পর্যন্ত নিয়োগ পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ করতে পারেনি অধ্যক্ষ ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব।
সকাল ১০ টার পরীক্ষা বিকালে কেন নেওয়া হলে এ প্রসঙ্গে জানার জন্য মগনামা মাঝির পাড়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ নুরের মুঠোফোনে ফোন করে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন সাড়া দেয়নি।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মগনামা আলিম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবাদপত্রে তিন দফায় একেক ধরনের ফি নির্ধারণ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। প্রকাশিত এসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে রহস্যজনক কারনে চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে একই পদে তিন ধরনের ফি চাওয়া হয়েছিল। এছাড়া আবেদনকারিদের কাছ থেকে গলাকাটা ফি নির্ধারণ করায় চাকুরী প্রার্থী ও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। এসব বির্তকের মধ্যেই ১৫ জুলাই সকাল ১০ টার পরিবর্তে বিকালেই মাদ্রাসা মিলনায়তনে যেনতেনভাবে নিয়োগ পরীক্ষার সম্পন্ন করে। এদিনে বিকালে বেশ তড়িগড়ি করেই নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের ডিজির প্রতিনিধি একই অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহফুজা ইয়াছমিন মাদ্রাসা ত্যাগ করেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ১ম দফায় দৈনিক সমকাল পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহবান করা হয়েছিল। সেখানে ফি চাওয়া হয়েছিল দেড় হাজার টাকা। সেবার ১০ জনেরও অধিক প্রাথী দেড় হাজার টাকা ফি দিয়ে ওই পদে আবেদন করেছিল। তবে ওই পদে অদ্যবধি পর্যন্ত কোন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পরে ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলো ও স্থানীয় দৈনিক বাঁকখালী পত্রিকায় মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষসহ ৬টি পদে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। এ বিজ্ঞপ্তিতে উপাধ্যক্ষ পদে ১ জন, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে ১ জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ২জন, নিরাপত্তা কর্মী পদে ১ জন, আয়া (মহিলা) পদে ১জন নিয়োগের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহবান করা হয়। ২য় দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উপাধ্যক্ষ পদে ৫ হাজার, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদন ফি ৩হাজার, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগের অবেদন ফি ২ হাজার টাকা ফি চাওয়া হয়েছিল। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে গলাকাটা ফি চাওয়া নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সর্বত্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সে বার আর নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেনি। গলাকাটা ফি নির্ধারণ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় মগনামা মাঝির পাড়া শাহ রশিদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব (মাদ্রাসা বিভাগ), মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসারের দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা। কিন্তু এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এখনো কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এদিকে বিগত ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে হাজির হয়ে একটি মুচলেকা প্রদান করেন।
২য় দফা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সমালোচনা-বিতর্ক শেষ না হতেই চলতি বছরের ১৮ ফেব্রেুয়ারি দৈনিক নয়াদিগন্ত ও দৈনিক আজকের দেশ বিদেশ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবারো ৮ পদে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের জন্য ৩য় দফায় বিভ্রান্তিমূলক বিজ্ঞপ্তি দেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুর। এ বিজ্ঞপ্তিতে নব সৃষ্ট পদে ১ জন উপাধ্যক্ষ, ১ জন ইবতেদায়ী প্রধান, ১জন অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, শুণ্য পদে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ২ জন, ল্যাব সহকারী পদে ১ জন, নিরাপত্তা কর্মী পদে ১ জন, নৈশ প্রহরী পদে ১জন ও আয়া পদে (মহিলা) ১ জন নিয়োগ করা হবে মর্মে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ৩য় দফায় দেওয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষার ফি ১ হাজার টাকা, ইবতেদায়ী প্রধান পদে ৮০০ টাকা, হিসাব সহকারী, অফিস সহকারী ও ল্যাব সহকারী পদে ৭০০ টাকা, নিরাপত্তাকর্মী, নৈশ প্রহরী ও আয়া পদে ফি চাওয়া হয়েছে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ ১ম দফা ও ২য় দফা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফি’র সাথে ৩য় দফায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির ফি নিয়ে কোন ধরনের মিল নাই। ২য় দফায় উপাধ্যক্ষ পদে ৫ হাজার টাকা ফি চাওয়া হয়েছিল। আর এবার উপাধ্যক্ষ পদে ফি চাওয়া হয়েছে ১ হাজার টাকা। একেক সময় একেক ধরনের নিয়োগ ফি চাওয়া অগ্রহণযোগ্য এবং বিভ্রান্তিকর এবং উক্ত তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিই বাতিলযোগ্য বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
পাঠকের মতামত: