ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়ার ইউআরসিতে ইন্সট্রাক্টরের অবহেলায় জাতীয় পতাকা টাঙানো হয়না!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::

কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার গুরুত্বপুর্ণ সরকারী অফিস উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি) এ কর্মরত ইন্সট্রাক্টর আবুল মনছুরের অবহেলার কারণে কার্যালয়ের সামনে সরকারী কর্মদিবসকালীন দিনের পর দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়না বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সরকারী এ অফিসের সামনে জাতীয় পতাকা টাঙানোর জন্য স্ট্যান্ড থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সরকারী কর্মদিবস চলাকালীন সময়ে জাতীয় পতাকা টাঙানো হচ্ছেনা। আজ ৮ নভেম্বর ২০২২ ইংরেজী দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পেকুয়া উপজেলা সদরের চৌমুহুনী স্টেশনে অবস্থিত উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে গিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার সত্যতা পাওয়া গেছে। দিনের পর দিন সরকারী উক্ত অফিসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক মহান জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করলেও এতোদিন বিষয়টি কারো নজরে আসেনি। গতকাল ৭ নভেম্বর স্থানীয় কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা এ প্রতিবেককে বিষয়টি ফোনে জানান। আর এর পরদিন ৮ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ প্রতিবেদক পেকুয়া উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে সরেজমিনে পরিদর্শন করে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার সত্যতা পান। এসময় দেখা গেছে, রিসোর্স সেন্টারের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য নির্ধারিত স্ট্যান্ড রয়েছে। ইউআরসির কার্যালয়ও তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এসময় কথা বলার জন্য উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের কর্মরত ইন্সট্রাক্টর আবুল মনছুরের খোঁজ নিলেও তাকে কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য যে. সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা রিসোর্স সেন্টার রয়েছে। উপজেলা রিসোর্স সেন্টারকে সংক্ষেপে ইউআরসি বলা হয়। ইউআরসির মাধ্যমে উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষকদের একাডেমিক ও কারিগরী সহযোগিতা প্রদান করা হয়। এটি একটি পরিপুর্ণ রাজস্বভুক্ত সরকারী প্রতিষ্টান।

জানা যায়, জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২-তে (সংশোধিত ২০১০) জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধিবিধান আছে। জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নিদর্শন। তাই সব সরকারি ভবন, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভবনে সব কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে। তা ছাড়া শহীদ দিবস ও জাতীয় শোক দিবসে বা সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্যান্য দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান করা হয়েছে। জাতীয় পতাকা শুধু একটি কাপড় নয়, এটি দেশের স্বাধীনতার প্রতীক। তাই পতাকার অবস্থা ব্যবহারযোগ্য না হলে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে সমাধিস্থ করতে হবে। জাতীয় পতাকা আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা বা জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করলে ওই ব্যক্তিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ২০১০ সালের জুলাই মাসে এই আইন সংশোধিত হয়। এই সংশোধনীতে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত শাস্তি এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদদর বিধান রাখা হয়।

পেকুয়া উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে সরকারী কর্মদিবস চলাকালীন জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে ইন্সট্রাক্টরের শাস্তি চেয়ে পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম মমতাজুল ইসলাম বলেন, জাতীয় পতাকা আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। এই পতাকার জন্য ১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে আমরা বাঙালী জাতি যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। আমাদের লাল সবুজের পতাকা আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। তিনি আরো বলেন, পেকুয়া ইউআরসিতে সরকারী কর্মদিবসচলাকালীন সময়ে ইচ্ছেকৃতভাবে সেখানকার কর্মকর্তা আবুল মনছুর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি। এটা চরম দু:খজনক। সরকারের কাছ থেকে বেতন খাবেন আর জাতীয় পতাকা অফিসের সামনে উত্তোলন করবেননা এটা মানা যায়না। ছাত্রলীগের সাবেক এ নেতা অবিলম্বে জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান প্রদর্শনকারী ও অবমাননাকারী পেকুয়া উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে কর্মরত ইন্সট্রাক্টর আবুল মনছুরকে গ্রেফতারপুর্বক শাস্তির দাবি জানান।

মঙ্গলবার ৮নভেম্বর ২০২২ইংরেজী সরকারী কর্মদিবস চলাকালীন সময়ে কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার প্রসঙ্গে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে কর্মরত ইন্সট্রাক্টর আবুল মনছুর এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি সকালে বিভাগীয় অফিসে কাজে গেছেন। তার কার্যালয়ে জনবল সংকট রয়েছে। অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক, নৈশ প্রহরী পদে জনবল নেই। তিনি একাই সব কাজ সামলাচ্ছেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আপনি (এ প্রতিবেদক) বিষয়টি আমাকে বলাতে ভাল হয়েছে। কাল থেকে যথাসময়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

এ বিষয়ে প্রাইমারী টিচার্চ ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের সুপারিনটেনডেন্ট (চলতি দায়িত্ব) অচিন্ত্য কৃমার মৃধা এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকারী কর্মদিবস চলাকালীন সরকারী কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পতাকা অবশ্যই উত্তোলন করতে হবে। এটা বাধ্যতামুলক। পেকুয়া ইউআরসিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার প্রসঙ্গে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: