ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

পুড়ছে উর্বর মাটি, পুড়ছে বনের গাছ ।। খাগড়াছড়িতে ২৬টি অবৈধ ইটভাটা

839ded961380d34ed98b9f942ada2b86ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি :::

যেন দেখেও না দেখার অবস্থা। আইনের তোয়াক্কা না করে খাগড়াছড়িতে অবৈধ ইটভাটায় শুরু হয়েছে ইট পোড়ানো। ইটভাটার জন্য ধানি জমি ও পাহাড় কেটে ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বন জঙ্গলের গাছ। মান হচ্ছেনা ইটভাটার চিমনি ব্যবহারের নিয়ম।

২০০৩ সাল থেকে খাগড়াছড়ির সব কটি ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ। এবার খাগড়াছড়ির ২৬টি অবৈধ ইটভাটায় শুরু হয়েছে ইট তৈরির কাজ। ইট তৈরির জন্য জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ধানি জমির উর্বর মাটি ও পাহাড় কাটা হচ্ছে। আগুন পোড়ানের জন্য বন জঙ্গল থেকে প্রতিদিন মণ মণ গাছ এনে মজুদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ইটভাটায় শুরু হয়েছে ইট পোড়ানো। প্রতি বছর প্রশাসনের সামনে নিয়ম নীতি না মেনে ইটভাটা কাজ চললেও নীরব প্রশাসন।

সরেজমিন কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ইট তৈরির জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৬ মাসের চুক্তিতে শ্রমিক আনা হয়েছে। এই ৬ মাস তাঁরা মাটি কাট থেকে শুরু করে কাঁচা ইট তৈরি এবং সর্বশেষ আগুন পুড়িয়ে তা বিক্রিযোগ্য করা পর্যন্ত কাজ করবে।

যে বয়সে খেলাধূলা করার কথা সে বয়সে নোয়াখালীর জাহাজ মারা এলাকা থেকে বড় ভাইয়ের সাথে কাজ করতে এসেছে পনের বছর বয়সী শাহিন আলম। সে জানায়, ‘ছয় মাসের লাইগা ভাইয়ের লগে ইটভাটায় কাজ করতে আইছি। এই ৬ মাস কাজ বাবদ ইটভাটার মালিক ৭০ হাজার টাকা দিয়া দিছে। ইট তৈরির কাজ শেষ হইলেই আবার গ্রামে চইলা যামু’।

একই এলাকা থেকে ইট ভাটায় কাজ করতে আসা মোঃ নুরুন্নবী জানান, চুক্তি মোতাবেক ৬ মাস ইট ভাটায় কাজ করবো। কাজ শেষ হলেই আবার ঘরে ফিরে যাবো। তখন হয়তো ধান কাটা, রিকসা চালানো কিংবা অন্য কোন পেশার সাথে যুক্ত হবো। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে যেকোন ইটভাটা ১২০ ফুট উচ্চতায় স্থায়ী চিমনি ব্যবহার করতে পারবে। পরিবেশবান্ধব কমপ্রেসড ব্লক ইট, হফম্যান কিলন ইত্যাদি ইটভাটা করা যাবে।

তবে খাগড়াছড়ির কোন ইটভাটা পরিবেশবান্ধবভাবে গড়ে উঠেনি। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ সালের ৫৯ নং আইনের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনের বিষয়ে বিধি বিধান আরোপ করা হয়।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ না করে কোন ভাটা যদি ইট প্রস্তুত করে সেক্ষেত্রে এক বছরের কারাদন্ড কিংবা এক লক্ষ টাকা জরিমানা কিংবা দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ধারা ৫ অনুযায়ী ইট তৈরির জন্য যদি কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, পুকুর, খাল হতে মাটি কেটে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন তাহলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। উক্ত আইনের ৬ ’এ বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করেন তাহলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে বাস্তব অর্থে এর কোন ধারায় মানা হচ্ছেনা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর নাক ডগার উপর চলছে এই ইটভাটাগুলো। অনেক সময় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে প্রশাসনকে অবগত করা হলেও দৃশ্যমান কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ জানান, ‘মাটির উপরের অংশ হচ্ছে জমির প্রাণ।

বিভিন্ন ফলন উৎপাদন হয় তা এই জমির উপরের উর্বর অংশ থেকে।

কিন্তু ইদানিংকালে দেখা যাচ্ছে জমির উপরের অংশটুকু ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য কেটে নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ইট তৈরিতে ব্যবহারের জন্য টন টন নানান জাতের গাছ কেটে মজুদ করা হচ্ছে। ফলে স্থানীয় পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। তিনি এই ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।তবে খাগড়াছড়ির ব্রিক ফিল্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এটিএম রাশেদ উদ্দিন বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে আমরা কোন কিছুই করছিনা। যারা পরিবেশবান্ধব ইটভাটা করছেনা তাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা শক্ত অবস্থান নিই। পরিবেশের ক্ষতি যাতে না হয় এই ব্যাপারে তাঁরা সজাগ আছে বলেও জানান তিনি। এদিকে ইটভাটায় ধানি জমি ও পাহাড় কাটা এবং নির্বিচারে গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এই বিষয়ে সহসাই একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক থেকে যারা নিয়ম মেনে ইটভাটা করছেন তাদের লাইসেন্স দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি অবৈধ ইট ভাটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। স্থানীয়রা বলছেন উন্নয়নের জন্য ইটভাটার প্রয়োজন রয়েছে। তবে তা যেন পরিবেশবান্ধব ইটভাটা হয়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজড় বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।

পাঠকের মতামত: