ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

পাহাড়ি ঢলে লামা প্লাবিত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী আলীকদমের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ: ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করছে প্রশাসন

লামা প্রতিনিধি ::

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা তিন দিনের প্রবল বর্ষণে উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মাতামুহুরী নদী, বিভিন্ন খাল ও পাহাড়ি ঝিরি সমূহের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। লামা –আলীকদম সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আলীকদমের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এদিকে, টানা বর্ষণের ফলে এক দিকে যেমন উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে শ্রমজীবি মানুষেরা কর্মহীন হয়ে পরিবার–পরিজন নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশংকায় ঝুঁিকপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। বন্যা কবলিতরা বিভিন্ন উচু পাহাড়, আত্মীয়–স্বজনের বাড়ি এবং পৌরএলাকার তিনটি অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, শনিবার থেকে টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণের ফলে উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সোমবার সকাল থেকে লামা পৌরএলাকাসহ উপজেলার গজালিয়া, রুপসী পাড়া, লামা এবং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চল সমূহ প্লাবিত হয়ে পড়ে। এসময় মাতামুহুরী নদী, লামা খাল, বমু খাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়ি খাল ও পোপা খালসহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ি ঝিরিগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, টানা বর্ষণের ফলে পাহাড়ি ঢলে নদী, খাল ও ঝিরির পানি ফুঁসে উঠে লামা পৌর এলাকার নয়াপাড়া, বাস স্ট্যান্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজার পাড়া, গজালিয়া জিপ স্টেশন, লামা বাজারের একাংশ, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিল পাড়া, বড় নুনারবিল পাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ , লামা থানা এলাকা, লাইনঝিরি নীচের এলাকা, শিলেরতুয়া, ছাগলখাইয়া, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজারের একাংশসহ লামা ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পৌর এলাকার হলিচাইল্ড পাবলিক স্কুল ও নুনারবিল সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়সহ দু’শতাধিক ঘরবাড়ি বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে।

সোমবার বিকালে পাহাড়ি ঢলের পানি কিছুটা নামতে শুরু করলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারো বৃদ্ধি পেতে থাকে। লামা বাজারের একাংশ বন্যা কবলিত হয়ে পড়লে বাজারের ব্যবসায়ীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়। ব্যবসায়ীদের মালামালসমূহ নিরাপদে সরিয়ে নিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দু’দিন পরে ঈদ। এখনই তাদের ব্যবসার সময়, কিন্তু এমন সময়ে ভারি বর্ষণ ও বন্যা তাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।

ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য দফায় দফায় তাগিদ দেয়া হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শারাবান তহুরা জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধূরী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে–এ–জান্নাত রুমি সোমবার উপজেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সাথে জরুরী বৈঠক করেছেন।

লামা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সাইফুদ্দিন জানান, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন টিএন্ডটি পাড়া সম্পূর্ণ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ওই এলাকার ২৫/৩০ পরিবার লামা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এছাড়া পৌরসভার নয়াপাড়া এলাকার বন্যা কবলিতরা লামা ফাজিল মাদ্রাসা ও লামা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ ইউছুপ আলী জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে লামা–আলীকদম সড়কের লাইনঝিরি এবং শিলেরতুয়া পয়েন্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আলীকদমের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

লামা পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে বন্যার পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। এছাড়া প্লাবিত লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্যা কবলিতদেরকে আশ্রয় নেওয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পৌর এলাকায় তিনটি অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে ৮০/৯০ জন বন্যা কবলিত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। রাতে হয়তো এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

এদিকে টানা বর্ষণের ফলে ঘর থেকে কাজে বের হতে না পারার কারণে উপজেলার শ্রমজীবী মানুষগুলো কর্মহীন বেকার হয়ে পড়েছে। এতে করে পরিবার–পরিজন নিয়ে তারা দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। পুরো উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। তবে কোথাও কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

পাঠকের মতামত: